এ সময় শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন?

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চারদিকে শুধু সবুজের হাতছানি। যতদূর চোখ যায় দেখা মিলে সারি সারি চা গাছ। আঁকাবাঁকা পথ, ছোট-বড় টিলা, ঘন সবুজ বন- সবকিছুই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

সিলেটের চা বাগান ঘুরে এতোটাই মনমুগ্ধকর হবেন যে ইচ্ছে করবে বারবার আসতে। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলে চোখ হবে শীতল। অপরূপ এক লীলাভূমি।

আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন শাপলার রাজ্যে

সবুজে ঘেরা চা বাগান, পাহাড়, নদী, ঝরনা, টিলা আর দু’পাশের সবুজ বৃক্ষ, নীল আকাশ সিলেটকে বানিয়েছে রূপের রানি। যা কোনো ভ্রমণপিপাসুকে সিলেটে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

হযরত শাহজালাল (র.) এর পুণ্যভূমি, হাছন রাজা, বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সিলেট। পাখির কিচির-মিচির, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, সবুজ ক্ষেত, ঘন অরণ্য আবার কোথাও পর্বতমালা দেখে যে কারো মন আনমনা হয়ে উঠবে।

তাই তো কবি বলেছেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ,সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’

আরও পড়ুন: ৬ বছরেই দেশের ৬৪ জেলা ঘুরেছেন সাফাত-শিখা দম্পতি

ধুলোর শহর ছেড়ে স্বস্তির বাতাস নিতে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা পারভেজের অনেকদিনের। যাবে যাবে করে যাওয়া হচ্ছিলো না তার। একদিন সেই শুভক্ষণ এলো। হাতে সময় পেতেই ঠিক করল শ্রীমঙ্গল যাবে।

বাসা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে রওনা হয়েছে কমলাপুরের উদ্দেশে। পৌঁছল সন্ধ্যা ৭ টায়। যানজটের শহর তাই একটু আগেই রওনা দিয়েছে সে। সে যাই হোক। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন চললো সিলেটের উদ্দেশ্যে।

বন্ধুরা মিলে গান গাইতে গাইতে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে চলতে লাগল তাদের ট্রেন ভ্রমণ। গভীর রাতে তারা পোঁছালো কাঙ্খিত স্থানে। রাতটা কোনো মতে একটি টঙের দোকানে আড্ডা দিয়ে তারা পার করলো।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডে অপরূপ ‘৯৯৯’ খেজুর বাগানে

ভোরের আলো ফুটতে দেখা মিলল সিলেটের আসল রূপ। জল-জঙ্গলের কাব্যের সঙ্গে পাহাড় আর চা বাগানের সুন্দর মেলবন্ধন। হঠাৎ হঠাৎ মেঘের আনাগোনায় যখন তখন বৃষ্টি, সেই কল্যাণে সারাবছর বয় শীতল বাতাস।

বাঙালি, মণিপুরী, খাসিয়া, টিপরা, গারোসহ নানান জাতির বসবাসে বৈচিত্র্যময় জনারণ্য গড়ে উঠেছে ছোট্ট উপজেলাটির আশপাশে। তাই শ্রীমঙ্গল যেন ভ্রমণার্থীদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য।

উঁচু-নিচু টিলাসমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গল উপজেলা। আয়তন ৪২৫.১৫ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগানও এ উপজেলায়। ঋতুভেদে একেক সময় একেক রূপে ধরা দেয় এখানকার প্রকৃতি।

আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ‘মানিকছড়ি ডিসি পার্কে’

তাই এখানে পর্যটকের ভিড় বছর জুড়ে লেগেই থাকে। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সিলেটের আকর্ষণ মানেই চা বাগান। বাংলাদেশের মোট ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৫টি আছে বৃহত্তর সিলেটে।

এর মধ্যে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানিগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন চা বাগান।

প্রাচীনতম চা বাগানগুলোর অন্যতম মালিনীছড়া আছে সিলেটে। ১৮৫৪ সালে লর্ড হার্ডসন ১৫০০ একর জায়গার ওপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সিলেটের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বল্প দূরত্বে এই চা বাগানটি অবস্থিত।

আরও পড়ুন: কম খরচে কীভাবে ঘুরবেন পান্থুমাই জলপ্রপাতে?

আরও আছে ১২০০ একর জমির ওপর অনিন্দ্য চা বাগান, রাবার আবাদের জন্য ৭০০ একর জমি এবং কারখানা, আবাসন, বৃক্ষ, বনজঙ্গল জুড়ে বাকি জমিটুকু।

যারা সুন্দর সবুজের গালিচায় হারিয়ে যেতে চান, তাদের জন্য অনন্য স্থান মালিনীছড়া চা বাগান। দেশের মোট চায়ের ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় সিলেটে। এ জন্য সিলেটকে বলা হয় ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ’।

সিলেটের চা বাগানে পারভেজ ঢোকার পর দেখল মাথার ওপর বড় বড় ছায়াবৃক্ষ। আলো-ছায়ার এমন সবুজ চাদর দেখে যে কারও মনে হবে এ নিশ্চয়ই কোন শিল্পীর নিখুঁত কাজ।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডবাসীরা ভাতের চেয়ে ফল খায় বেশি

সিলেটের চা বাগানের এ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন ছুঁয়ে গেল পারভেজের। আরও ছিল ট্যাং ফল, আগর, চন্দনসহ অনেক ঔষধি-শোভাবর্ধক বৃক্ষ।

সিলেটের চায়ের রং, স্বাদ এবং সুবাস অতুলনীয়। চা বাগানের বুক ভেদ করে চলে গেছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক। সড়কের পাশেই একটি গাড়ি থেকে নামল কিছু ভিনদেশি। বাগানটির অদ্ভুত সুন্দরের মায়ায় পড়েছিলেন তারা। ক্যামেরাবন্দি করলেন কিছু ছবি।

আরও পড়ুন: অপরূপ যাদুকাটা নদী ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, কত খরচ?

শ্রীমঙ্গলে উন্নতমানের আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরার ব্যবস্থা আছে। অন্যান্য জায়গার থেকে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলে ঘোরাঘুরি বেশি উপভোগ করেন। এখান থেকে সব পর্যটন স্পটে যাওয়ার জন্য আছে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা।

যানবাহনেরও নেই কমতি। ইকো-গাইডরাও প্রস্তুত আপনাকে ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। যারা চা বাগানের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাদের ঘোরার জন্য শ্রীমঙ্গল উত্তম জায়গা।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।