কক্সবাজারে প্রেম আসে গভীর রজনীতে

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২১ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৮

গভীর রজনী। তখন আমি কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচে। এত রাত তবুও যেন পর্যটকদের কমতি নেই। নিজেকে কেন জানি খুব একা এক মনে হচ্ছে। চলছে মানুষ আর সমুদ্রের মধ্যে প্রেমলীলা। রাতের নিস্তব্ধতাকে হার মানাচ্ছে ঢেউয়ের ঝাঁকুনি, কিছুটা ঠাণ্ডা বাতাস, তবুও সামনে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সমুদ্রের উত্তাল টেউয়ে মনে শিহরণ তুলছে সবার। ঢেউ আসছে সাদা ফেনা নিয়ে। রাত যত গভীর হচ্ছে গর্জন ততো বাড়তেই আছে। দলবেঁধে তখনও পর্যটকরা আসছেন সমুদ্র সৈকতে, দেখছেন রাতের সমুদ্র। কেউবা সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে নিচ্ছেন। আবার প্রেমিক-প্রেমিকারার পাড়ে বসে ঢেউ উপভোগ করছে।

jagonews24

নিরাপত্তার কারণে রাতের বেলায় কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করা একটা সময় প্রায় অসম্ভব ছিল কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে পর্যটকরা মধ্যরাতেও সৈকতে অবস্থান করে রাতের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা বিচে হ্যালোজেন লাইট লাগানো হয়েছে। যে কারণে সুগন্ধা বিচে গভীর রাতেও থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে রাতেও থাকে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল।

সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে ঢেউয়ের গর্জন শুনছেন অনেকে। কেউবা আবার সৈকত সংলগ্ন দু-পাড়ে গড়ে উঠা ঝিনুকসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখা মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে সেরে নিচ্ছেন কেনাকাটাও। এখানকার এই দোকানগুলোও খোলা থাকে গভীর রাত পর্যন্ত।

jagonews24

আব্দুল হান্নান। ঝিনুক, শুটকি বিক্রি করেন। বলেন, আমাদের দোকান সারারাত খোলা থাকে। এখন যেহেতু পর্যটকরা সারারাত বিচে ঘুরতে আসে তাই তারা কেনাকাটাও করে। গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকরা বিচে সময় কাটিয়ে হোটেলে যায়, তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় গভীর রাতে পর্যটকদেরও উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। এ কারণে আমাদের দু’পাশের মার্কেটে প্রায় ৪০/৫০ টা দোকান সারারাত খোলা থাকে।

টাঙ্গাইল থেকে সমু্দ্র দেখতে এসেছে অনার্সে পড়া ৫ শিক্ষার্থী। সৈকত সংলগ্ন আবাসিক হোটেল থেকে রাত ৯টার দিকে সমুদ্র সৈকতে এসেছেন তারা, ঘড়ির কাটা পেরিয়ে রাত ১টার বেশি বাজলেও তারা সুগন্ধা বিচে এখনও ঘুরছেন। এদের মধ্যে একজন জুয়েল রানা।

jagonews24

গভীর রাতেও সৈকতে ঘোরার বিষয়ে বলেন, এই বিশাল সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজারে আগে কখনই আসিনি। এটা আমার জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখা। কাছ থেকে সমুদ্র দেখা এ এক ভিন্ন অনুভূতি। তাই সমুদ্র তীরে বসে আছি, মাঝে মাঝে টেউয়ের স্পর্শে পা ভিজিয়ে নিচ্ছি, যে কারণে এত রাত হওয়ার পরও হোটেলে ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

গভীর রাতে সমুদ্র সৈকতে ঘুরছেন আরেক দল, তারা এসেছেন ঢাকার আশুলিয়া থেকে। একজন প্রদীপ কুমার শাহা। বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে রাতের দৃশ্য এক অন্য রকম ভালো লাগা। যারা এই রূপ দেখেনি তারা কোনভাবেই বুঝতে পারবে না। রাতের এ দৃশ্য যতবারই দেখি ততবারই বুকের ভেতরটা ভরে ওঠে।

jagonews24

সৈকত সংলগ্ন রিকশা-অটোরিকশার স্ট্যান্ডে কথা হয় চালক লিটন মিয়ার সঙ্গে। বলেন, দিনের বেলা সমুদ্র গর্জন কম শোনা গেলেও রাতের বেলা জোরে গর্জন শোনা যায়। এছাড়া সৈকতে লাইট দিয়ে আলোকিত করার কারণে রাতের বেলা সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে আসে অনেকেই। সারারাতই ভাড়া পাওয়া যায় অটোরিকশা।

কথা হয় ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে। জানান, পর্যটকদের সুবিধার্থে সমুদ্র সৈকত এখন খুব আলো। এছাড়া রাতের বেলাতেও আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। চারদিকে আমাদের নজর থাকছে। ট্যুরিস্টদের কোনো ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এএস/এমআরএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।