বেলকুচি উপজেলা চত্বর যেন একটা মিনি পার্ক

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

বেশ কিছু দিন আগে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলায় গিয়েছিলাম বাংলাদেশ বেতারের একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে। সবাই ঠিক সময়ে পৌছে গেলেও আমার পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।

তাই উপজেলা চত্বরে অপেক্ষা করছিলেন বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর ভাই, বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক সজীব দাদা ও মাইটিভির প্রতিনিধি লতিফ ভাই। আমি গাড়ি থেকে নেমেই সরাসরি চলে গেলাম তাদের কাছে।

উপজেলা চত্ত্বরের গোল ঘরে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। একই সঙ্গে খেলাম পেয়ারা মাখানো। এরপর আনিস ভাই পুরো উপজেলা চত্বর ঘুরে দেখালেন।

jagonews24

আমি অনেক উপজেলা ঘুরেছি তবে আমার জীবনে এমন সুসজ্জিত সুন্দর উপজেলা কখনো দেখিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান জানান, তিনি নিজে বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে উপজেলা সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেছেন।

বেলকুচি উপজেলা তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় এখানের অধিকাংশ জায়গায় নলকূপ থেকে রং মিশ্রিত পানি বের হয়। তাই তিনি প্রথমেই উপজেলার নাগরিকদের কথা চিন্তা করে সুপেয় পানির জন্য বসিয়েছেন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। যেখান থেকে বিনামূল্যে খাবারের পানি সংগ্রহ করে স্থানীয়রা।

এছাড়া ভবনের চারদিকের দেওয়ালে চমৎকার ভাবে টেরাকোটার (পোড়া মাটির ফলক) মাধ্যমে ফুটে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আবহমান বাংলার গ্রামীণ ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

jagonews24

পুরো উপজেলার চারপাশসহ মাঝের হাঁটার রাস্তাগুলো বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে সাজানো। শাপলা চত্ত্বর, পানির ফোয়ারা, বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য ব্রেঞ্চ, বেডমিন্টন কোর্ট, মুক্তমঞ্ছ, বৈশাখী মঞ্চসহ নানাভাবে নিজ পরিকল্পনায় উপজেলাটি সাজিয়েছেন ইউএনও আনিসুর রহমান।

অন্যনা উপজেলার বঙ্গবন্ধু চত্বরের চেয়ে এই উপজেলার বঙ্গবন্ধু চত্বরটা আলাদা। এখানেও ফুল ও লাইটিং দিয়ে জমকালো করে তোলা হয়েছে। উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও করা হয়েছে আলাদা ও ভিন্নভাবে।

বেলকুচির শাহ আলম (৬০) নামে এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা দেখেছি কয়েক বছর আগে এই উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানি জমে থাকতো। খুবই নিচু ছিল।’

jagonews24

‘বর্ষাকালে তো হাটারই উপায় ছিলো না। আনিস স্যার আসার পরে তিনি নিজে এই উপজেলা তার মনের মতো করে সাজিয়েছেন। অনেকেই এখন ঘুরতে আসেন এই উপজেলায়।’

উপজেলা চত্বরে শিশুর নির্মল বিনোদনের জন্য এক পার্শ্বে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুপার্ক। বিভিন্ন ফুল-ফলের প্রতিকৃতি, ট্রি হাউজ, দোলনা, ঢেঁকি, বসার জায়গা, পদ্মসেতুর প্রতিকৃতি, সেলফি কর্নারসহ নানা রকম সুন্দর স্থাপনা দিয়ে সুসজ্জিত।

উপজেলা পরিষদে আনন্দমুখর সময় কাটাতে ও অবসর সময় ঘুরতে অনেক মানুষজন আসেন। শুধু উপজেলাই না বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে দেখে যায় উপজেলা চত্বরটি। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে উপজেলা চত্বরেই দেওয়া হয়েছে একটি কফি শপ।

উপজেলা চত্বরে ঘুরতে আসা জান্নাতুল ফেরদৌসী নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ‘আমরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে শাড়ি পড়ে এখানে ঘুরতে এসেছি।’

‘আমাদের উপজেলায় তেমন ঘোরার কোনো জায়গা নেই। তাই আমরা এই চত্বরেই সময় কাটাই। আমার মতো আরও অনেকেই অবসর সময়ে এখানে ঘুরতে আসেন।’

jagonews24

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বরাদ্ধ থেকে এ উপজেলা সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ করে যাচ্ছি। আমি প্রথমে এসে খুবই শোচনীয় অবস্থায় এই উপজেলা চত্বরটি পাই।’
‘এরপর আমার একান্ত প্রচেষ্টায় আজকের এই উপজেলা চত্বর। দেখতেই তো পাচ্ছেন কেমন করা হয়েছে! এই উপজেলা চত্বর ঘুরে ছেলে-মেয়েরা যেনো কিছু শিখতে পারে। শিক্ষনীয় বিষয় মাথায় রেখেই সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেছি।’

সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম-সচিব) ড ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদ ঘুরে দেখেছি। এখানকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার যে কাজটি করেছেন তা সত্যিই অনেক প্রশংসনীয়। আমি বিভিন্ন সময় এসে কাজের তদারকী করেছি।’

তিনদিন ছিলাম এই উপজেলায়। উপজেলা চত্বরটি ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে। আর আনিস ভাইয়ের আতিথিয়েতা ভোলার মতো না। আপনারা চাইলেই এই উপজেলা চত্বর ঘুরে আসতে পারেন।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।