নিজ হাতে সাড়ে ১৩ হাজার পরিবারকে খাবার দিয়েছেন নাফিসা
নাফিসা আনজুম খান। করোনা মহামারিতে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে ছুটেছেন অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে। বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৩ হাজার পরিবারকে খাবার দিয়েছেন তিনি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া নাফিসা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজে।
নাফিসা বলেন, ‘লকডাউনে আমার কাছে অনেক দূর থেকে মানুষ খাবারের জন্য এসেছে। তখনই আমি বুঝলাম, আমরা দামি রেস্তোরাঁয় খাই, খাবার অপচয় করি। অথচ আমাদের ধারণার বাইরে যে, সামান্য কিছু খাবারের জন্য মানুষ কত কষ্ট করে। একবার একজন আমার কাছে যাত্রাবাড়ী থেকে পায়ে হেঁটে এসেছে খাবারের জন্য। তার কাছে রিকশা ভাড়া নেই। দেখা গেছে এমন অনেক পরিবার খাবারের জন্য এসেছে।'
নিজের কার্যক্রমের বিষয়ে নাফিসা বলেন, 'আমাদের একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে, যেটা ভাড়ায় চলে। লকডাউনে এটা বন্ধ ছিল। তখন আমি ভাবলাম মানুষ যদি আমার কাছে খাবারের জন্য আসতে পারে আমি কেন যেতে পারব না। তখন থেকেই সিএনজি নিয়ে বের হওয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে বাধা না দেয়, সে জন্য একটা ব্যানার বানিয়ে নেয়া। তখন মনে হলো দেশের জন্য কিছু করি। নাম দিলাম ‘নাফিসা খান একজন বাংলাদেশি।'
বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ একটা আবেগের জায়গা। দেশে থাকলে এটা বোঝা যায় না। প্রবাসীরা কিন্তু দেশকে নিয়ে ভাবেন। দেশকে ভালোবাসার সৎ সাহস যদি নিজের মধ্যে থাকে, দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার সৎ সাহস যদি থাকে, তাহলে আমি বলব, প্রত্যেকেই নিজের জায়গা থেকে একজন বাংলাদেশ হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন। যখন সে দেশকে নিজের মধ্যে ধারণ করবে তখন তার শক্তি বেড়ে যাবে।'
কাজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলেন, 'আমার মধুর এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিক্তটা হচ্ছে- আমি একজন মেয়ে হিসেবে বাধাগ্রস্ত হই। অনেকে বলে- আমি কেন এই কাজ করছি। কেন খাবার দিচ্ছি। তবে আমি এসব এভয়েড করি। আর মধুর অভিজ্ঞতা হচ্ছে- মানিকগঞ্জে গিয়ে যখন মানুষকে খাবার দিলাম, তখন মানুষের যে হাসি ওইটা দেখলেই কষ্ট ভুলে যাই। সেই হাসির দাম কোনোভাবেই মূল্যায়ন করা যাবে না।'
নাফিসা আনজুম খান জানান, তিনি নিজের হাতে সাড়ে ১৩ হাজার পরিবারকে খাবার দিয়েছেন। এছাড়া আরও অনেককে খাবার দিয়েছেন যার পরিসংখ্যান তার কাছে নেই।
নাফিসা বলেন, ‘আমি ৭ জেলায় ২৯টি টিউবওয়েল স্থাপন করতে পেরেছি। খাবারের পানির ব্যবস্থা করেছি। এর পাশাপাশি মাদরাসা থেকে ফোন পাই, কারও কোরআন শরিফ, রেহাল প্রয়োজন, ব্লাকবোর্ড প্রয়োজন। তারপর এমন মসজিদ পেয়েছি যেখানে আজানের মাইক নেই, এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছি। এমনকি নোয়াখালীর ফেনীতে ১৪ বছর যে গ্রামে নামাজ হয়নি সেখানে মসজিদ করেছি।’
খাবার প্যাকেট করা থেকে নিয়ে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সব নাফিসাকেই করতে হয়। শুধু তাই নয়, মুঠোফোনে আসা কল রিসিভ করে, খুদে বার্তা পড়ে কাদের সাহায্য বেশি প্রয়োজন বা কোন এলাকার কতজন তার হিসাবও রাখেন তিনি।
নাফিসা জানান, গত কয়েক দিন দেড় হাজার কল পেয়েছেন। যার মধ্যে ৮০০ পরিবারকে এই মুহূর্তে খাবার দিতে হবে।
তিনি জানান, যারা তার কাজে সহযোগিতা করতে চান তারা ০১৭১১০৮৫০৬৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া নাফিসা আনজুম খানের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারেন।
করোনা সংক্রমণের সময় মানুষের অবাধ চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা নিজেদের হাসির পাত্র হিসেবে তুলে ধরছি। আমি বলব এটা আমাদের জন্য লজ্জা। যদি কষ্ট করে আমরা লকডাউনকে মেনে নেই, তাহলে দেখব আমরা করোনামুক্ত হতে পারব।'
নাফিসা ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন।
জেডএইচ/এমকেএইচ