সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও ক্ষমতা বাড়েনি


প্রকাশিত: ০৬:০৫ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় জাতীয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ক্রামন্বয়ে বাড়লেও ক্ষমতা বাড়েনি তাদের। সংসদীয় কমিটিতে নারী সদস্যের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে প্রথমবার দশম সংসদে ইতিবাচক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। নবম সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ২০ শতাংশ আর কমিটিতে তা ছিল ১০ শতাংশ। আর চলমান দশম সংসদে প্রতিধিত্বের অনুপাতে (২০ শতাংশ) কমিটিতে সদস্যপদ দেয়া হয়।

সংসদীয় কমিটির সভাপতির ক্ষেত্রে নবম সংসদে ছয়টি কমিটিতে চারজন ও দশম সংসদে আটটি কমিটিতে পাঁচজন নারী সভাপতি রয়েছেন। তবে এর চারটিতেই সংসদের স্পিকার হিসেবে পদাধিকারবলে নারী সভাপতি মনোনীত হন। কমিটির সভায় নারী সদস্যের সংখ্যার ক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় ইতিবাচক অবস্থান লক্ষ্য করা গেলেও নারীদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবস্থান দেখা যায় না।

যে ৯টি কমিটির উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে পাঁচটি কমিটিতেই পুরুষ সদস্যদের তুলনায় নারী সদস্যের উপস্থিতি কম। কমিটির নারী সভাপতির ক্ষেত্রেও বিলম্ব উপস্থিতি এবং সে কারণে সদস্যদের মধ্যে অসন্তুষ্টির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে বলেও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রোববার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশের নারীরা এখনও পেছনে পড়ে আছেন। এজন্য আর্থ-সামাজিক অবস্থা দায়ী। নারীদের উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ করে দিয়ে তাদেরকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই দেশ সমৃদ্ধ হবে।

জানা যায়, ‘সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে মাত্র একজন ছিলেন নারী। তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০ বছরের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়। ১৯৭৮ সালে সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৩০-এ উন্নীত এবং এর মেয়াদ ১৫ বছর করা হয়। ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৪৫ ও এর সময়সীমা ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়। আর পঞ্চদশ সংশোধানীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন করা হয় ৫০টি।’

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে নারীরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ক্ষমতায়নের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছেন তারা। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তিনবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপির কর্ণধার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছেন দুই নারী।

এছাড়া দশম জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টিরও সংসদীয় দলের প্রধান নারী। সংসদ নেতা, উপনেতা, স্পিকার ও হুইপ পদেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন নারীরা। অথচ নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের বিষয়টি এখনও রয়ে গেছে বলে দাবি  করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্ষমতায় নারী, অথচ ক্ষমতায়নে নেই! জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া আর অগ্রগতি কিছুই হয়নি। এসব আসনে বসে দ্বিতীয় শ্রেণীর এমপি হিসেবে সংসদের শোভা বর্ধন আর অব্যাহত কোরাম সঙ্কট কাটানো ছাড়া বিশেষ কোনো ক্ষমতাই দেয়া হয়নি তাদের। এমপি হিসেবে প্রাপ্ত বরাদ্দেও রয়েছে বৈষম্য।

করুণার এই ক্ষমতায়ন নিয়ে নারী নেত্রীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করলেও দলীয় প্রধানের আনুগত্য হারানোর ভয়ে চুপসে রয়েছেন তারা। এছাড়া দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে সংবিধান অনুযায়ী তাদের এমপি পদটিও থাকবে না।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান দশম সংসদের সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকারসহ ৭০ জন নারী নেত্রী রয়েছেন। এদের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি মাত্র ২০ জন। আর বাকি ৫০ জনই দল মনোনীত সংরক্ষিত আসনের এমপি।

সরাসরি নির্বাচিতদের মধ্যে মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৬ জন, জাসদের ১ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন রয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের ৫০ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪২ জন, ওয়ার্কাস পার্টির ১ জন, জাসদের ১ জন ও জাতীয় পার্টির ৬ জন রয়েছেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংসদে নারীদের সংখ্যা বাড়লেও ক্ষমতা বাড়েনি। এখনও তারা সমান সুযোগ পান না। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপিদের জন্য আন্য এমপিদের নির্বাচনী এলাকা বরাদ্দ দেয়ায় তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না।

এইচএস/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।