শিক্ষকতা ছেড়ে ফল চাষে স্বাবলম্বী ছানোয়ার

শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে গ্রামে ফিরে ফল চাষ শুরু করেন ছানোয়ার হোসেন। কয়েক বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক খামার গড়ে ওঠে তার। বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফল চাষ শুরু করেন এলাকার অনেকেই। তারাও লাভবান হচ্ছেন। ছানোয়ার হোসেন জেলার সফল উদ্যোক্তার খ্যাতি পেয়েছেন। বাণিজ্যিক খামার স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখায় জাতীয় কৃষি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
বর্তমানে ছানোয়ার হোসেন আনারস, কলা, পেঁপে, ড্রাগন, পেয়ারার পাশাপাশি কফি ও কাজুবাদাম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। বিশেষ করে গড় এলাকার কফি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। গড়াঞ্চলের মাটি, ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও মাটির উর্বরা শক্তি ভালো থাকায় কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ছানোয়ার প্রায় ৫৫ বিঘা জমিতে এসব ফসল আবাদ করেছেন।
ছানোয়ার হোসেন মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের মহিষমারা কলেজপাড়া গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। ৪ সন্তানের মধ্যে তিনিই একমাত্র ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৩ সালে ছানোয়ার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রেংগা হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কৃষির প্রতি একাগ্রতায় বেশি দিন চাকরি করতে পারেননি।
পাঁচ বছর শিক্ষকতার পর চলে আসেন নিজ গ্রামে। পৈতৃক জমিতে আগে থেকে আনারস চাষ করা হতো। বাড়িতে ফিরে আনারস চাষ দিয়ে কৃষিকাজে যুক্ত হন। এরপর একে একে ড্রাগন, কলা, পেয়ারা ও কফি চাষ শুরু করেন। কৃষিতে সফলতা পেয়ে উপার্জিত অর্থে নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন মহিষমারা কলেজ।
সরেজমিনে জানা যায়, ছানোয়ার হোসেন নিজেই বাগানের পরিচর্যা করছেন। এ ছাড়া কর্মচারীরাও তাকে সহযোগিতা করছেন। তার বাগানে কফির ফুল ফুটলেও এখনো ফলন হয়নি। একই সঙ্গে ড্রাগন গাছে ফল আসেনি। তবে পেয়ারা গাছে ফল ধরেছে। কলা চাষেও বেশ ভালো ফলন হয়েছে। আনারস এখনো পরিপক্ব হয়নি।
ছানোয়ার হোসেনের বাগানের কর্মচারী মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে এখানে কাজ করছি। বর্তমানে পেয়ারা ও কলা বাগানের পরিচর্যা করছি। এতে ভালোই রোজগার হয়।’
আরেক কর্মচারী হযরত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বাগানে নিড়ানি, সার-বীজ দেওয়া থেকে সব কিছুই করি। এতে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে পাই। ফলে সংসারের যাবতীয় খরচ এর ওপর নির্ভর করে।’
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছানোয়ার হোসেনকে দেখে আমিও পেয়ারা বাগান করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ছানোয়ার আমাকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি কৃষিতে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন। আমাদের এলাকার অহংকার তিনি।’
মাহিম ও আবু তাহের বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি ছানোয়ার হোসেন কৃষিকাজ করছেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এমন সফলতা পেয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক কৃষিকাজে আগ্রহী হচ্ছেন।’
ছানোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে ভালো পেশা হলো কৃষি। কৃষিতে বেশি লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব। তাই শিক্ষকতা ছেড়ে কৃষিকাজ করছি। আধুনিক পদ্ধতিতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছি। এতে বেশ লাভবান হয়েছি। কেমিক্যালমুক্ত এসব ফল চাষ করছি। সবকিছুই স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদভাবে করছি।’
তিনি বলেন, ‘এক একর জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধি বাগান করেছি। একই সাথে সৌখিনভাবে ৩০ থেকে ৪০ ধরনের ফলেরও আবাদ করছি। পরিকল্পিতভাবে কৃষিকাজ করলে অনেক কিছুই সম্ভব। জেনেশুনে ও বুঝে কৃষিতে কাজ করলে লস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। চাকরি ছাড়ায় অনেকেই পাগল বলতো। আমি প্রমাণ করেছি, সঠিকভাবে কৃষিকাজ করলে লাভবান হওয়া যায়। চাকরির পেছনে না ঘুরে তরুণদের কৃষিকাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছানোয়ার হোসেন একজন সফল চাষি। তাকে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।’
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এসইউ/জেআইএম