গারো পাহাড়ে আনারস চাষে নতুন সম্ভাবনা

শেরপুরের কৃষিতে যুক্ত হয়েছে রসালো ফল আনারস। এতে জেলার কৃষিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে এ ফল। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং বন্যহাতির আক্রমণ ঠেকাতে পারলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার হেক্টর পতিত জমি আনারসের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। এতে কৃষকেরাও পাবেন আর্থিক সচ্ছলতা।
জানা যায়, শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৪০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। পাহাড়ি এলাকায় শত শত হেক্টর জমিতে কাসাভা আলু ছাড়া কিছু চাষ করা হতো না। স্থানীয় বাজারে কাসাভার চাহিদা কম থাকায় এবং চাষ তেমন লাভজনক না হওয়ায় অধিকাংশ জমি প্রায় অনাবাদিই থাকতো।
ফলে অভাব-অনটন ছিল এখানকার কৃষকদের নিত্যদিনের সঙ্গী। পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি, পাথর ভাঙা, লাল বালু তোলার শ্রমিকের কাজ করে অধিকাংশের জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। বর্তমানে এসব এলাকার পরিশ্রমী কৃষকেরা নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করে পাহাড়ি জনপদের কৃষিতে বিপ্লব এনেছেন। সংসার জীবনে এসেছে সচ্ছলতা।
ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক জমশন ম্রং জানান, চার বছর আগে তার বাড়ির পাশের ১৮ বিঘা পতিত পাহাড়ি জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন আনারস চাষ। এতে সাফল্যও পেয়ে যান। হাতির আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতির পরেও ১৬ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেন। অনেকেই তার আনারস বাগান দেখতে এসে চাষ করতে আগ্রহী হন।
কৃষকেরা জানান, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীতে আনারস চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। এখানে জলডুবি জাতের আনারস চাষ করা হয়। এসব আনারস মধুপুরের আনারসের চেয়ে মিষ্টি। প্রথমবার তারা চারা সংগ্রহ করেন মধুপুর এবং রাঙ্গামাটি থেকে। এখন নিজেরাই চারা উৎপাদন করেন। চারা সরবরাহ করাসহ আনারস চাষে সব রকম সহযোগিতাও করেন। আনারস চাষি জমশন ম্রং জানান, গজনী অবকাশ এলাকায় ৩ বিঘা জমিতে আনারস চাষে ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সব খরচ উঠিয়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করেন তিনি।
পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকায় ১৮ বিঘা পাহাড়ি জমিতে দেড় লাখ আনারস চাষ করেন আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার মধুপুর এবং রাঙ্গামাটি থেকে চারা সংগ্রহ করি। এখন নিজেই চারা উৎপাদন করছি। যে কেউ চাষের জন্য চারা সংগ্রহ এবং পরামর্শ পেতে পারেন। এ আনারস খুবই সুস্বাদু। চাষও লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। বন্য হাতি ক্ষতি না করলে ভালো ফলন এবং মুনাফা পাবো।’
আনারস চাষি সুব্রত বলেন, ‘দুই বছর যাবৎ জলডুবি আনারস চাষ করছি। আশা করছি গতবারের মতো ভালো ফলন পাবো।’ এ ছাড়াও আনারসের ক্ষেতে পরিচর্যার কাজ করে অনেকেই আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান বাকাকুড়া গ্রামের মো. বিজয় ও সবুর আলীসহ কয়েকজন শ্রমিক।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মাটি এবং আবহাওয়া আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন। ঝিনাইগাতীর চাষ দেখে নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদীতেও চাষ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আনারস পাশের জেলায় বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষকেরা লাভবান হবেন।’
এসইউ/জিকেএস