তরমুজে লাভের আশা দাকোপের চাষিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০৮:১৯ এএম, ২৭ মার্চ ২০২৩

মাঠের পর মাঠ তরমুজের সবুজ ক্ষেত। সেই ক্ষেতে ধরেছে সবুজ সবুজ তরমুজ। কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গত দুই বছরে যে লোকসান হয়েছিল, তা একটু হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে; এমন স্বপ্নে বিভোর খুলনার দাকোপ উপজেলার তরমুজ চাষিরা।

চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। কেউ চারা গাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। আবার কেউ দিচ্ছেন সার। এভাবেই চলছে তরমুজ চাষাবাদের কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছেন দাকোপের তরমুজ চাষিরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে চাষিদের স্বপ্নের তরমুজ গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে ফলনও এসেছে অধিকাংশ গাছে। দাকোপের কৃষক থেকে শুরু করে দিনমজুর, নারী, পুরুষ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, কিশোর, কিশোরীসহ সাধারণ মানুষ স্বপ্নের তরমুজ ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

তরমুজে লাভের আশা দাকোপের চাষিদের

সরেজমিনে জানা যায়, সূর্য যখন মাথার ওপর; তপ্ত রোদ তখন। এসময়ে উপজেলার অধিকাংশ মাঠে নারী-পুরুষ মিলে পানি দিচ্ছেন সোনালি ফসলে। উপজেলায় ড্রাগন, পাকিজা, সুইট ড্রাগন ও বিগপাকিজা জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বেড়েছে তরমুজ চাষ, ভালো বিক্রির আশা কৃষকের

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নসহ চালনা পৌরসভায় শোভা পাচ্ছে তরমুজ গাছ। আগামী ১ মাসের মধ্যে শুরু হবে ফল বিক্রি। ন্যায্যমূল্য পেলে কৃষকেরা বেশ লাভবান হবেন। গত বছর দাম না পাওয়ার কারণে অধিকাংশ চাষি লোকসানের মুখে পড়েন। ফলে এবছর তরমুজ চাষ অনেক কম হয়েছে। অনেকে ফিরে গেছেন বোরো ধান চাষে।

উপজেলায় মোট আবাদি জমি ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর। লবণ অধ্যুষিত হওয়ায় শতভাগ জমি আমন চাষের আওতায় আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে তরমুজ চাষ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। গত বছর উপজেলায় ৭ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় অধিকাংশ চাষি পুঁজি ফিরে পাননি। অনেকের ক্ষেত ছিল অবিক্রিত অবস্থায়। যার প্রভাবে এবছর তরমুজ চাষ কম হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।

উপজেলার বাজুয়া গ্রামের তরমুজ চাষি রণজিৎ মন্ডল জানান, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাকিজা জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। আগামী মাসের শেষের দিকে তরমুজ বাজারজাত করা শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

তরমুজে লাভের আশা দাকোপের চাষিদের

একই এলাকার রাধারানী মন্ডল বলেন, ‘আমি ২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আশা করি লাভবান হবো। তবে বাজারে যার তরমুজ যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি হবে। তাই আগে-ভাগেই তরমুজ চাষ করেছি। এ বছর বীজ ও সারের দাম একটু বেশি। এজন্য খরচও বেশি হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার ভালো থাকলে আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: আগাম তরমুজ চাষে সফল ভৈরবের ৪ কৃষক

শুধু রণজিৎ মন্ডল কিংবা রাধারানী মন্ডল নন, তরমুজ চাষ করেছেন কামাল হোসেন, হুমায়ুন কবির, প্রণয় মন্ডল, সূর্য মন্ডল, সোহেল মল্লিক, ব্রজেন মন্ডল, আইয়ুব আলী ও আব্দুল মজিদের মতো অনেক কৃষক। কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মীরা।

উপজেলার আনন্দ নগর গ্রামের কৃষক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। তরমুজ ক্ষেতের বর্তমান অবস্থা অনেক ভালো। জমি থেকে আমন ফসল ঘরে তোলার পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জমি প্রস্তুত করে একটু আগে-ভাগে তরমুজের বীজ বপন করি। তাই তরমুজ গাছগুলো দ্রুত বড় হচ্ছে এবং ক্ষেতের কিছু কিছু গাছে ফল বেশ বড় হয়েছে। কিছু গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। তাই ক্ষেত থেকে ফল পাতলা করে দিয়েছি। একটি গাছে একটি ফল রেখে বাকি ফল তুলে ফেলেছি। এতে ফল দ্রুত বড় হয়। আগে থেকেই ফল কাটা যায়। উপযুক্ত মূল্য পেলে ঝড়-বৃষ্টি ও দুর্যোগ আসার আগেই ক্ষেতের তরমুজ বিক্রি করা যাবে।’

উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘চলতি তরমুজ মৌসুমে দাকোপ উপজেলায় ৬,৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তাই মাঠ পর্যায়ে আমি এবং আমার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের সঙ্গে রয়েছি। তরমুজ চাষিদের বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণসহ ক্ষেতের সব ধরনের সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তাদের স্বপ্নের ফসল বিক্রি করে অনেক লাভবান হবেন।’

আলমগীর হান্নান/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।