বিলুপ্তির পথে মৌলভীবাজারের বাংলা পান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ১৪ মে ২০২৩

মৌলভীবাজারের মনু নদীর তীরজুড়েই একসময় বাড়ৈ সম্প্রদায় পানের বরজ তৈরি করে পান চাষ করতেন। এরসঙ্গে লাউ মরিচ ও বেগুন ছিল সহায়ক। সিলেটসহ লন্ডন যেতো মৌলভীবাজারের এ বাংলা পান। ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পান আসতে থাকায় কদর কমেছে বাংলা পানের। ফলে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে বাংলা পান।

পান চাষের সঙ্গে জড়িতরা জানান, বরজ তৈরির উপকরণ ছন, বাঁশ, বেত ও শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন পান চাষ। পান চাষ ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন তারা। জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার মনু নদীর তীরের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু চাষি সুপারি গাছের পাতা দিয়ে বরজ তৈরি করে পান চাষ করছেন।

বিজ্ঞাপন

কৃষি বিভাগ বলছে, এ পর্যন্ত বাংলা পান চাষের জন্য কোনো প্রকল্প নেই আমাদের হাতে। জেলায় ২৫-৩০ একর ভূমিতে বাংলা পান চাষ হয়ে থাকে। নিজ উদ্যোগেই চাষ করেন তারা। আগে বাংলা পান চাষে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার জড়িত ছিল। বর্তমানে সংখ্যা কমে শতাধিক হয়েছে। এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। এ অঞ্চলে বাংলা পানের পরিকল্পিত চাষাবাদ ঘুরিয়ে দিতে পারে বাড়ৈ সম্প্রদায়ের ভাগ্যের চাকা। জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে ভূমিকা।

jagonews24

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: বদলগাছীতে সমন্বিত চাষে লাভবান আব্দুর রউফ

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের কুড়িগ্রামের সুব্রত কর জাগো নিউজকে বলেন, ‘পান চাষ করে সংসারের খরচ চলতো। বাংলা পান ধরে রাখার জন্য আমরা চাষ করি। কিন্তু এখন ছন, বাঁশ ও শ্রমিক না পাওয়ায় বরজ তৈরি করতে অনেক কষ্ট হয়। ৮ শতাংশের ভূমিতে ৩ বছর মেয়াদের একটি বরজ তৈরি করতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বছর মেরামত খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। লাভ হয় ৩০ হাজার টাকা।’

রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের টুপির মহল গ্রামের কোলনিশি দে জাগো নিউজকে বলেন, ‘পান বিক্রি করে একসময় অনেক লাভ হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চলতো। অতীতে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পান চাষ হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানি করা যেতো। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় পানের চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

jagonews24

টিলাগাঁও ইউনিয়নের চকসালন গ্রামের বাবুল দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো একসময় আমাদের গ্রামের শতভাগ মানুষ পান চাষের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিগত ৫-৭ বছরে পানের দাম কমেছে। বাইরের পান আসায় পানের প্রকৃত মূল্য পাচ্ছি না। বর্তমানে ১৫-১৬ ভাগ মানুষ পান চাষ করছেন। সরকার উদ্যোগ নিলে হয়তো আবার পান চাষে মানুষ ফিরে যাবে।’

আরও পড়ুন: বৈশাখ মাসে পাট চাষে করণীয়

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৌলভীবাজারে খাসিয়া পানের চাষ বেশি হচ্ছে। বাংলা পানের চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের জানামতে, ২৫ একর ভূমিতে বাংলা পান চাষ হয়। এ পর্যন্ত আমাদের হাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা পান চাষের কোনো প্রকল্প আসেনি। কোনো সুযোগ এলে আমরা বাংলা পান চাষিদের পাশে দাঁড়াবো।’

আব্দুল আজিজ/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।