পরিবেশ সুরক্ষা
কার্বন বাজারে বিনিয়োগ ও বিকাশে সুস্পষ্ট নীতিমালার সুপারিশ
বিশ্বব্যাপী কার্বন বাজার থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রায় ১.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি কার্বন ক্রেডিট বাজারেও বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নত রান্নার চুলা এবং সৌর গৃহ ব্যবস্থার মতো প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৬ সাল থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এত সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্বন খাতে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে এ খাতে বিনিয়োগ অনেক কম। কারণ কার্বন ক্রেডিট বাজার নিয়ে আমাদের দেশে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা নেই। এ অবস্থায় এই খাতের বিকাশে সুস্পষ্ট নীতিমালাসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
সোমবার (২৬ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে কার্বন অর্থায়নের উপায়: বেসরকারি খাতের সম্ভাবনা এবং নীতিমালায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। আন্তর্জাতিক কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের কার্বন বাজারের প্রস্তুতি, প্যারিস চুক্তির অধীনে অনুচ্ছেদ ৬ কার্যকর করার বিষয়ে বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আহমেদ জুবায়ের মাহমুদ, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের নীতিনির্ধারণ বিষয়ক উপদেষ্টা অসিম রহমান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ শাহাদাত হোসেন শাকিল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সাসটেনিবিলিটি বিভাগের হেড সুমাইয়া টি আহমেদ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এর বিজন ইসলাম। কৃষি, বাংলাদেশ ও কার্বন মার্কেট শীর্ষক উপস্থাপনা তুলে ধরেন জিরো ১৩ (ZERO13) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিংকন টিও।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন অর্জন করা এবং একই বছরের মধ্যে শর্তসাপেক্ষে ৮৯.৪৭ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ কমানো। যা টেকসই কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি ২০৫০ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ঢাকা শহরকে পরিবেশ সহায়ক ও বাসযোগ্য করার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে আহমেদ জুবায়ের মাহমুদ বলেন, আমরা সবুজ অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করেছি। এখন চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে- কার্বন ফাইন্যান্সিং এর ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ভালো দৃষ্টান্ত অণুসরণ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং সেক্টরের সহায়তা নিয়ে সরকারি-বেসরকারিসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা।
বিজন ইসলাম বলেন, আমাদের দরকার উদ্ভাবনী এবং টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা। যা সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলবে। কার্বন ফাইন্যান্সিং এর মাধ্যমে বিনিয়োগের নতুন উৎস খোঁজার তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কেবল প্রবৃদ্ধির বিষয়ক না দেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে। এগুলো হচ্ছে: কার্বন নিঃসরণ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো, প্রযুক্তি সংযুক্তির মাধ্যমে শিল্পে দক্ষতা আনয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বনায়নে কার্বন অর্থায়নের সুযোগগুলোকে কাজে লাগানো, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে আরও সহজতর করা এবং আর্থিক বাধাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধানে কাজ করা।
এর পাশাপাশি আলোচকরা এই খাতে সঠিক কৌশল ও বিনিয়োগ বাড়ানো, তফসিলি ব্যাংক ও বড় প্রতিষ্ঠানকে এ খাতে অর্থায়নে উৎসাহিতকরণ, কার্বনের বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করতে নীতিগত সহায়তা, কার্বন ফাইনান্সিংকে এগিয়ে নিতে সুস্পষ্ট নীতিমালা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জেএইচ/জিকেএস