চাকরি না পেয়ে আম চাষের শুরু, আজ সফল উদ্যোক্তা সজিব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২৫

অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আর দশজন গ্র্যাজুয়েটের মতোই চাকরির খোঁজ শুরু করেন রাজবাড়ী বালিয়াকান্দির ভিমনগর গ্রামের যুবক এনামুল হক সজিব। কিন্তু অনেকদিন চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত আম চাষ করার পরিকল্পনা করেন তিনি।

মা’য়ের পরামর্শ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহযোগিতায় আজ তিনি ভোক্তা পর্যায়ে বিষমুক্ত আম পৌঁছে দিয়ে সফল উদ্যোক্তা।

বর্তমানে এই বাগানে বারি ফোর, ব্যানানা, হারিভাঙ্গা, কাঠিমন, নবাব পছন্দ, মল্লিকাসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম রয়েছে। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল হওয়ায় সব আম বাজারের চেয়ে বেশি দামে বাগান থেকে বিক্রি করছেন সজিব।

প্রায় পাঁচ বছর আগে বাড়ির অদুরে চার বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫০ গাছ দিয়ে বাগান তৈরি করেন তিনি। এক বছর পর গাছে ফলন আসলেও মাছি-পোকার আক্রমণ ও কীটনাশকের অতিরিক্ত খরচে ক্ষতির মুখে পড়েন সজিব। কিন্তু পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করেন তিনি। এই বারে লাভবান হন তরুন এ উদ্যোক্তা।

চাকরি না পেয়ে আম চাষের শুরু, আজ সফল উদ্যোক্তা সজিব

ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের কারণে যেমন ফলের ওজন বৃদ্ধি পায়, তেমনি দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু হয়। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত হওয়ায় এলাকায় বেশ চাহিদা রয়েছে এই আমের। এ কারণে বাগান থেকেই বাজার দরের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে সজিবের বাগানের আম।

এদিকে পাশেই তার আরও চার বিঘা জমিতে রয়েছে মিশ্র কমলা-মাল্টা ও কুলের চাষ। সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে তিনি ফল চাষ করছেন। তার এমন সফলতা দেখে অনেকেই ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন ।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি পেঁয়াজ-পাটসহ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফল চাষেও অন্যতম। বর্তমানে বিষমুক্ত ফল উৎপাদন করতে উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ফলের বাগান তৈরি করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম তরুণ উদ্যোক্তা এনামুল হক সজিব, যিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে সর্ব প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ শুরু করছেন।

চাকরি না পেয়ে আম চাষের শুরু, আজ সফল উদ্যোক্তা সজিব

এই ব্যাগের কারণে ফল মাছি-পোকাসহ অন্যান্য রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পায় এবং ফলনও ভাল হয়। এই পদ্ধতিতে ফলের চাষ বৃদ্ধি করা গেলে সারা বছরই নিরাপদ ও ভাল ফল পাওয়া সম্ভব। এছাড়া যথাযথ ভাবে ব্যাগ ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে পারলে এগুলো দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, বর্তমানে বাজারে যে সমস্ত আম বা ফল পাওয়া যায়, সেগুলো মৌসুমের কয়েক মাস আগের অথবা কয়েক মাস পরেও থাকে। ফলে এটা সবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এগুলোতে কেমিক্যাল মেশানো থাকে। এনামুল হক সজিবের ফ্রুট ব্যাংকিং পদ্ধতিতে আম চাষ দেখে খুব ভালো লাগছে। এই আমে কোন মাছি পোকার আক্রমণের চিহ্ন বা দাগ নাই এবং আমগুলো সাইজে অনেক বড় ।

আমগুলো দেখতে খুব সুন্দর এবং আমরা খেয়ে দেখেছি, এটি অনেক সুস্বাদু। ফলে বিষমুক্ত ও ভালো ফল হওয়ায় বাগান থেকে একটু বেশি দামেই কিনছি। দেশের সকল চাষি এই পদ্ধতিতে ফল চাষ করলে আমরা সারা বছরই বিষমুক্ত ফল পেতাম। তাই ভবিষ্যতে আমরাও এ ধরনের বাগান করার চেষ্টা করবো, বলেন তিনি।

চাকরি না পেয়ে আম চাষের শুরু, আজ সফল উদ্যোক্তা সজিব

বাগান মালিক এনামুল হক সজিব বলেন, আমি পড়াশুনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে মায়ের পরামর্শের আট বিঘা জমিতে মিশ্র ফল বাগান করি। তার মধ্যে আম অন্যতম। আমার বাগানে বারি ফোর, হিমসাগর, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা, মল্লিকা সহ বেশ কয়েকটি জাতের আম রয়েছে। প্রথম অবস্থায় ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার না করায় মাছি পোকা সহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলাম। পরবর্তীতে কৃষি অফিসের বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও অফিসারের মাধ্যমে এই ফ্রুট ব্যাগিং সম্পর্কে ধারনা পাই এবং তাদের উৎসাহে চার বছর আগে থেকে এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমে কোন মাছি পোকার আক্রমণ হয় না। আমের ওজন ১০০ গ্রাম হওয়ার পরেই ব্যাগ পরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আর কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। যার কারণে আমগুলো দেখতে সুন্দর হয় এবং আকারে বড় হয়। এছাড়া আমের গায়ে কোন দাগ থাকে না। বিষমুক্ত, দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় আমার বাগানের আমের চাহিদা অনেক। যার কারণে বাগান থেকে বাজারের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। এই বাগান করে আমি সফল।

চাকরি না পেয়ে আম চাষের শুরু, আজ সফল উদ্যোক্তা সজিব

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিকভাবে বালিয়াকান্দিতে এই প্রথম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফলের চাষ হচ্ছে। এই ব্যাগিংয়ের কারণে ফল মাছি-পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় এবং নিরাপদ পরিবেশ বান্ধব ফল উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিতে চাষ করা ফল বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। এতে ফলের কালার যেমন সুন্দর হয়, তেমনি সাইজ ও গঠন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা লাভবান হন। তাই আমরা নিরাপদ বিষমুক্ত ফল উৎপাদনে এই ধরনের বাগান তৈরিতে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করছি এবং এই ধরনের চাষীদের উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবে।

রুবেলুর রহমান/এএমপি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।