কীটনাশক ও সেচ

ঠেকানো যাচ্ছে না লিচুর গুটি ঝরা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক স্প্রে ও সেচ দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিটি গাছের ৪০-৫০ ভাগ গুটি ঝরে গেছে। ফলে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আর মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই মোজাফ্ফর জাতের দেশি লিচু পাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার প্রচণ্ড খরায় লিচুর গুটি শুকিয়ে যাওয়ায় আকার ছোট হতে পারে। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে লিচু না পাকার আশঙ্কাও করছেন চাষিরা।

রসালো ও সুস্বাদু লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঈশ্বরদীতে বৈশাখের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল আসে এবং চৈত্র মাসে মুকুল থেকে লিচুর সবুজ গুটি দেখা যায়। এখন লিচু গাছের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে মার্বেলের মতো সবুজ গুটি। এ গুটি বড় হয়েই লালচে রং ধারণ করবে এবং পাকতে শুরু করবে। কিন্তু এ বছর প্রচণ্ড দাবদাহে লিচুর এসব সবুজ গুটি ঝরে পড়ছে। এ বছর প্রতিটি গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল। মুকুল থেকে গুটিও বেশ ভালো হয়েছিল। তাই এবার চাষিরা লিচুর ভালো ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু গত ২৮ মার্চ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত অনাবৃষ্টি ও টানা তাপদাহে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। তাই লিচু চাষিদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। বৈশাখ মাসে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি লিচু গাছে এবার ভালো মুকুল এসেছিল। এবার লিচুর ভালো ফলনের আশা করেছিল কৃষি বিভাগ। কিন্তু প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ায় ফলন কিছুটা কমে যাবে।

ঠেকানো যাচ্ছে না লিচুর গুটি ঝরা

সরেজমিনে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, লিচু গাছের ৪০-৫০ ভাগ লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। লিচু গাছের নিচে মার্বেল আকারের শত শত লিচুর সবুজ গুটি ঝরে পড়ে আছে। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী লিচু বাগান পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। কিন্তু তীব্র তাপদাহের কারণে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না লিচুর গুটি ঝরা। প্রতিদিন অস্বাভাবিকভাবে গুটি ঝরেই যাচ্ছে।

লিচু চাষিরা জানান, তারা লিচুর ঝরা প্রতিরোধে নিয়মিত গাছের গোড়া সেচ দিচ্ছেন এবং প্রতিটি লিচু গাছের ওপর পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি অনুখাদ্য (পিজিআর), জিংক (দস্তা), সাইপার মেথ্রিন ও পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড ব্যবহার করছেন। কিন্তু এতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

উপজেলার চরকদিমপাড়া গ্রামের লিচু চাষি আমিনুল ইসলাম চন্দন জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিচু বাগানের ৪০ ভাগ গুটি ঝরে গেছে। কীটনাশক ও সেচ দিয়েও গুটি ঝরা থামানো যাচ্ছে না। গাছে মুকুল বের হওয়ার পর যে পরিমাণ বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, সেটা হয়নি। এমনকি মুকুল থেকে গুটি হওয়ার পর প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে গুটি ঝরে পড়ছে।’

মানিকনগর পূর্বপাড়া গ্রামের লিচু চাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজের লিচু বাগানের পাশাপাশি আরও তিনটি বাগান ৪ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। সার, কীটনাশক, বাগান পরিচর্যাসহ অন্য খরচ আরও ২ লাখ টাকা হবে। আমার ধারণা ছিল তিন বাগানে কমপক্ষে ৫ লাখ লিচু হবে। কিন্তু গুটি ঝরে যাওয়ায় এখন মনে হচ্ছে ৩ লাখের বেশি লিচু হবে না। এখন তো তাপপ্রবাহের কারণে ঝরছে। তারপর ঝড়-বৃষ্টি আছে। এবার লিচুর যে কী অবস্থা হবে বুঝতে পারছি না।’

ঠেকানো যাচ্ছে না লিচুর গুটি ঝরা

একই এলাকার কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘নিজের বাড়িতে একটি ছোট লিচুর বাগান আছে। পাশাপাশি ২১ গাছের একটি বাগান কিনেছিলাম। আশা ছিল ৫০ হাজার লিচু হবে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এখন মনে হচ্ছে ১০ হাজারের বেশি লিচু আশা করা যায় না।’

বালাইনাশক ও সার ব্যবসায়ী মোস্তফা জামান নয়ন বলেন, ‘প্রচণ্ড খরার কারণে গুটি ঝরে যাচ্ছে। এ নিয়ে চাষিদের মতো আমরাও খুবই চিন্তিত। লিচু ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয়। এখন ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি। তাই স্বাভাবিকভাবে গুটি ঝরে যাচ্ছে এবং কিছু গুটি ফেটে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের কীটনাশক ব্যবহার করেও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না।’

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ‘লিচুর গুটি ঝরা রোধ করতে পরামর্শ ও সচেতন করতে কৃষকদের সঙ্গে উঠান বৈঠক শুরু করেছি। কৃষকদের জানানো হচ্ছে, সকালে ও রাতে গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। খুব ভোরে গাছের ওপরে পানি স্প্রে করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই রোদ ওঠার পর সেচ দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। নিয়মানুযায়ী সেচ ও ছত্রানাশক স্প্রে করে গুটি ঝরা কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে।’

শেখ মহসীন/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।