বরিশালে বন্দি জেরি ভিক্টর সম্পর্কে জানতে ইন্টারপোলে তথ্য প্রদান


প্রকাশিত: ০২:৪৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বরিশালে আটক বিদেশি নাগরিকের পরিচয় ও তার সম্পর্কে জানতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আটক বিদেশি নাগরিকের উচ্চতা, ওজন, চুলের রং, স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে তা ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। কবে নাগাদ ওই বিদেশি নাগরিকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। বর্তমানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে বন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ওই বিদেশি বরিশাল কারাগারে রয়েছেন।

মামলার বর্তমান (দ্বিতীয়) তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) তইয়েবুর রহমান জানান,  জিজ্ঞাসাবাদে আটক বিদেশি তার নাম জেরি ভিক্টর (৫২) বলে জানিয়েছেন। পেরুর রাজধানী লিমায় তার জন্ম। সেখানে তার স্ত্রী ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। জেরি ভিক্টরের ভাষ্য মতে গত ২১ ডিসেম্বর ভারত থেকে সড়ক সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর বরিশালে বিপ্লব নামে এক ব্যক্তি তাকে অচেতন করে পাসপোর্ট ও টাকা ছিনিয়ে নেয়।
 
জিজ্ঞাসাবাদে ভিক্টর আরো জানান, তিনি পেরু ও শ্রীলঙ্কার নগরিক। এক সময় হুণ্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ চক্রের হয়ে তিনি ১৭/১৮টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা তইয়েবুর রহমান বলেন, জেরি ভিক্টরের ভাষ্য মতে বিপ্লবের অনেক খোঁজ করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল ও আশে পাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ওই নামে বা আকৃতির কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটি রহস্যের সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে জেরি ভিক্টরের সম্পর্কে জানতে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, সম্প্রতি ‘ইজতেমায় এসে পেরুর নাগরিকের ঠাঁই হয়েছে বরিশাল কারাগারে’ শিরোনামে কয়েকটি অনলাইনে এবং পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা তইয়েবুর রহমান বলেন, ইজতেমা একটি ভালো কাজ । কিন্ত যারাই ইজতেমায় অংশ নেন তারা দলগত হয়েই বৈধভাবে বাংলাদেশে আসেন। কেউ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ইজতেমায় অংশ নিবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি যদি ইজতেমার উদ্দেশেই আসতেন তাহলে ঢাকার টঙ্গীর দিকে তার যাওয়ার কথা ছিল। উল্টোপথে বরিশালের দিকে আসার কথা নয়। এ ধরনের খবর প্রকাশ পাঠকদের বিভ্রান্ত করার শামিল।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম জানান, সদর উপজেলার চরকাউয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে জেরি ভিক্টরকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয় লোকজন। জ্ঞান ফেরার পর জেরি পুলিশকে জানান, তাকে মারধর করে পাসপোর্ট ও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি। এসময় তিনি একটি পাসপোর্ট নম্বর দেন পুলিশকে। নম্বরটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও ওই নম্বরের কোনো পাসপোর্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুপ্রবেশের অভিযোগে জেরি ভিক্টরের বিরুদ্ধে বন্দর থানা পুলিশের এসআই শাহ সাব খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তিনি কারাগারে রয়েছেন। দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জেরি ভিক্টর এক এক সময় এক এক রকমের কথা বলেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে কখনো বলেছেন, ২০১০ সালে তিনি ভারতে  আসেন। খ্রীষ্ট সম্প্রদায়ের জেরি ভিক্টর ভারতে একটি অনুষ্ঠানে জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নাম রাখা হয় মো. আব্দুল্লাহ। তিনি সুন্দর ভাবে কুরআন তেলওয়াত করতে পারেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে নাকি স্বজনদের সঙ্গে জেরি ভিক্টরের সম্পর্ক ছেদ হয়।

ওসি মাহবুব আলম জানান, আটকের পর তিনি নিজে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক দফায় জেরি ভিক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে জেরি ভিক্টর বাংলাদেশে ইজতেমার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন একথা কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বলেনি।

এ ব্যাপারে বরিশাল তাবলীগ জামাতের মুরব্বী সিটি কলেজের প্রভাষক মতিউর রহমান জানান, পেরুর কোনো নাগরিক গত কয়েক মাসের মধ্যে বরিশালে তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্যে আসেনি। বরিশালে তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্যে বিদেশি কোনো মেহমান আসলে একা আসেন না। দলগতভাবে জামাতের সঙ্গী হয়ে আসেন। যারাই তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্যে আসেন তাদের নাম চৌমাথা মারকাজ মসজিদের রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা থাকে। একই ভাবে যারা তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন ঢাকার কাকরাইল মারকাজ মসজিদে তাদের নাম লিখে রাখা হয়।

সাইফ আমীন/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।