ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপনায় এখনো শেখ পরিবারের নাম, বসানো হয়নি নতুন ফলক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নাম কাগজে-কলমে পরিবর্তন হলেও বাস্তবে তা এখনো আগের নামেই বহাল রয়েছে। স্থাপনার ফলকে এখনো আগের নামই বিদ্যমান। কিছু স্থাপনায় প্রশাসনিক কাজেও আগের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬৭তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শেখ হাসিনা হলের নাম হবে ‘জুলাই–৩৬ হল’, শেখ রাসেল হল হবে ‘শহীদ আনাছ হল’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল হবে ‘শাহ আজিজুর রহমান হল’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল হবে ‘উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল’ এবং ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন হবে ‘ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন’। পরে ৫ মার্চ এক অফিস আদেশে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট হল ও ভবনগুলোর মূল ফটকে নতুন নামযুক্ত অস্থায়ী ব্যানার লাগানো হয়। এগুলোর অনেকগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। ফলে এখনো আগের নামই বিদ্যমান। অনেকক্ষেত্রে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও পূর্ববর্তী নামগুলোই ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এস সুইট জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়ে গেলেও শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনার নাম এখনো দৃশ্যমান। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। দ্রুত এসব স্থাপনায় নতুন স্থাপন করতে হবে। সব ধরনের নথিপত্রে নতুন নাম ব্যবহার করতে হবে।’
‘প্রশাসনের ফান্ডে টাকা কম ছিল, তাই আমাদের আপাতত ব্যানার লাগানোর কথা বলেছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অর্থবছরে নাম পরিবর্তনের বিলটিও পাস হবে। তবে হলের যাবতীয় নথিপত্রে আমরা নতুন নামে কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. একেএম রাশেদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের বিষয়ে হল টিউটরদের নিয়ে মিটিং হয়েছে। এ বিষয়ে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মিস্ত্রির সঙ্গে অলরেডি কথাও বলেছি। খুব শিগগির এটি বাস্তবায়ন করা হবে।’
- আরও পড়ুন:
ইবির সব স্থাপনা থেকে শেখ পরিবারের নাম পরিবর্তন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকের নাম হচ্ছে ‘মুগ্ধ সরোবর’
‘তোমারে পুইত্তা ফালামু’ ছাত্রীকে ইবি শিক্ষিকার হুমকি
শহীদ আনাছ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের হলের নামফলক যেহেতু টাইলসের, তাই প্রথমে এটি ভাঙতে হবে। তারপরে নতুন করে টাইলসের বরাদ্দ দিতে হবে। সামনের মিটিংয়ে বিষয়টি প্রশাসনের কাছে উত্থাপন করবো।’
শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘জুলাই-৩৬।’ ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. একেএম শামসুল হক বলেন, ‘আমরা নামের বিষয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। সমাধান হওয়ার পর আমরা নামের অর্ডার দিয়েছি। সোমবারের মধ্যে কাজটি কমপ্লিট হবে। তবে হলের নথিপত্রে আগের নাম অনেক আগেই পরিবর্তন করা হয়েছে।’
শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রশাসনের ফান্ডে টাকা কম ছিল, তাই আমাদের আপাতত ব্যানার লাগানোর কথা বলেছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অর্থবছরে নাম পরিবর্তনের বিলটিও পাস হবে। তবে হলের যাবতীয় নথিপত্রে আমরা নতুন নামে কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে, এখন এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব হল প্রভোস্টদের ওপর বর্তায়। শুধু হলের নাম না, হলের ভেতরে নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন লেখা এখনো দেখা যাচ্ছে। এগুলোর প্রতিও নজর দিতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. গফুর গাজি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে, এখন এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব হল প্রভোস্টদের ওপর বর্তায়। শুধু হলের নাম না, হলের ভেতরে নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন লেখা এখনো দেখা যাচ্ছে। এগুলোর প্রতিও নজর দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি বিষয়টি উত্থাপন করবো। এ বিষয়ে প্রভোস্টদের অনুরোধ করা হবে।
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘আমি খুবই ব্যস্ত আছি। সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। সন্ধ্যার পরে অথবা ১০টার পরে ফোন দিও।’ পরে সন্ধ্যা এবং রাত ১০টার পর ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসআর/জেআইএম