ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

প্রশাসনিক গাফিলতির প্রতিবাদ ও তদন্ত দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড সেই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এছাড়া এ ঘটনায় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তারা।

শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হন হাজারও শিক্ষার্থী। এসময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা মরদেহ দেখে প্রশাসনকে জানানোর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর সেই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন এ প্রশ্ন করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মরদেহ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোনো ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে তারা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে মেডিকেলে নিয়ে যান। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, মরদেহ শনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কোনো সিসি ক্যামেরা সচল নেই। ফলে দেখা যাচ্ছে না ওই শিক্ষার্থী কখন কোথায় গিয়েছিল। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয় মত শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসনিক গাফিলতির প্রতিবাদ ও তদন্ত দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।

এর আগে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসনিক গাফিলতির প্রতিবাদ ও তদন্ত দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে অনেকের মনে নানা উঠেছে। আদৌও তার সঙ্গে কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা, এসব প্রশ্ন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ইরফান উল্লাহ/এমএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।