সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
মওলানা ভাসানী পাকিস্তানকে নানান জাতিসত্তার কারাগার হিসেবে দেখতেন
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পাকিস্তানকে বিভিন্ন জাতিসত্তার কারাগার হিসেবে দেখতেন বলে জানিয়েছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, শুধু বাঙালির নয়—পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ ও পাঠানসহ সব জাতিসত্তার মুক্তির কথা বলেছেন ভাসানী। এ কারণেই তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়ে নয়, বরং একজন সমাজবিপ্লবী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস রেখে আজীবন মুক্তির স্বপ্ন লালন করেছেন।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বি-উপনিবেশায়ন ও মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মওলানা ভাসানী ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত হতে চাননি। বরং মেহনতি মানুষের সঙ্গে থেকেছেন এবং তাদের মুক্তির সংগ্রামে আজীবন যুক্ত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (কারাস)-এর আয়োজনে দুদিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মওলানা ভাসানীকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নেতা উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা বর্তমানে যে বি-উপনিবেশিকরণের আলোচনা করছি সেখানে ভাসানীর বিশ্বাস প্রথম দিক থেকেই ছিল। এ উপমহাদেশে বিখ্যাত রাজনৈতিকরা জন্মগ্রহণ করলেও ভাসানীর মতো খ্যাতি কেউ পাননি। তার মতো মেহনতি মানুষের সমর্থনে রাজনীতি করার দ্বিতীয় মানুষ উপমহাদেশে আমরা দেখিনি।

তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বিশ্বাস করতেন না, বরং সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে কংগ্রেসে থাকলেও পুঁজিপতির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কংগ্রেস ত্যাগ করেন। পরে মুসলিম লীগে যোগ দেন এই প্রত্যাশায় যে, দলটি কৃষক ও গরিব মানুষের কথা বলবে। তবে তার কল্পিত পাকিস্তান ছিল কায়েদে আজমের পুঁজিবাদী পাকিস্তানের বিপরীতে একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্তির পাকিস্তান—যেখানে একাধিক জাতিসত্তার সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যায় তার ২১ দফা, ১৪ দফা ও ১১ দফা কর্মসূচিতে; যেখানে নদী, পানি ও বন্যা সমস্যার মতো সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও অধ্যাপক আহমেদ কামাল। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনিভার্সিটি ব্রুনাই দারুসসালামের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইফতেখার ইকবাল, স্বাগত বক্তব্য দেন কারাসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, মওলানা ভাসানী কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন একটি নৈতিক কণ্ঠস্বর ও বিবেক। তিনি বিশ্বাস করতেন- ধর্ম মানুষের নৈতিক শক্তির উৎস হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিক অধিকার এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা হতে হবে মূল শক্তি।
ভাসানী ক্ষমতার রাজনীতির চেয়ে জনতার রাজনীতিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা আবরার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দুপুর ১২টায় প্রতিকৃতি আলোকচিত্রী ও লেখক নাসির আলী মামুনের একটি বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পরে ভাসানীর ওপর পেপার প্রেজেন্টেশন হয়।
এফএআর/এমকেআর/এএসএম