শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বোরোবি
প্রকাশিত: ০৭:১৭ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নির্মাণাধীন ছাত্রী হল এবং তার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে নির্মাণাধীন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কাজ প্রায় নয় মাস ধরে বন্ধ।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, অর্থের অভাবে ভবন দুটির কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। যৌথভাবে ভবন দুটি নির্মাণ করছে ফরিদপুরের মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোম্পানি ও মেসার্স আব্দুস সালাম অ্যান্ড কোম্পানি নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মালিক হাবিবুর রহমান এবং আব্দুস সালাম।

jagonews

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনে এবং গবেষণা কার্যক্রম সচল রাখতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে এক হাজার আসনের শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই মেসার্স আব্দুস সালাম অ্যান্ড কোম্পানি ও মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোম্পানি নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি ভবন দুটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বন্ধ ভবন দুটির নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে ভবন দুটির বেশকিছু পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে খোলা আকাশের নিচে নির্মাণাধীন ভবনের রডগুলো ফেলে রাখায় মরিচা ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ নির্ধারিত সময়ে ছাত্রীদের হল নির্মাণ না হওয়ায় দেখা দিয়েছে চরম আবাসিক সংকট। রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা কার্যক্রম।

jagonews

কাজ বন্ধের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের আগের কনসালট্যান্ট মনোয়ার হাবীব তুহিনের নিয়োগ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপাচার্যের পছন্দসই কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিতেই কাজ বন্ধ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নতুন কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। তবে দেয়া হয়েছে কি-না সেই ব্যাপারে তারা জানাতে পারেননি।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে দুই ট্রাক ভর্তি রড সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে ঠিকাদারের কর্মকর্তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা উপস্থিত হওয়ায় আটকে দেয়া হয় রড ভর্তি ট্রাক দুটি। তবে ঠিকাদার কর্মকর্তারা জানান, কাজ বন্ধ থাকায় প্রশাসনের অনুমতিতেই রডগুলো অনত্র ব্যবহারের জন্য সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মুহিব্বুল ইসলাম উপস্থিত হন।

জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, দুটি ভবনেরই প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় বিল দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা পরিশোধ করা হচ্ছে না। কাজের বিল পেলেই কাজ শুরু করবেন বলে তিনি জানান।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বেরোবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সারা বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। ষড়যন্ত্রকারীরা সকল জায়গায় ওঁৎপেতে আছে। তাই যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর আবেগ জড়িত। তাই প্রধানমন্ত্রীর নামে হল এবং তার স্বামীর নামের ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা কোনোভাবেই ঠিক না।

jagonews

এ ব্যাপারে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কসের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ছুটিতে ছিলাম, এসেছি। এখনও ওই কাজে যাইনি। গিয়ে বিষয়টি দেখব। মরিচা ধরা রড নির্মাণ কাজে ব্যবহার করতে দেয়া হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি গিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মো. শরীফ হোসাইন পাটোয়ারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ঢাকায় ব্যস্ত আছি। এসব কথা মুঠোফোনে বলা যায় না বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরবর্তীতে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে উপাচার্যের একান্ত সচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আমিনুর রহমান জানান, স্যার ঢাকায় আছেন।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।