বেনাপোল

সরকারি স্কুলে অনাগ্রহ, চাপ বাড়ছে কিন্ডারগার্টেনে

জামাল হোসেন
জামাল হোসেন জামাল হোসেন , উপজেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর) বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৬:১৪ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নানা কারণে শিক্ষার্থী কমছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে শিশুদের। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও মেলে। অন্যদিকে কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করানো ব্যয়বহুল। তারপরও শিশু সন্তানদের পড়াশোনা করাতে কিন্ডারগার্টেনের দিকেই ঝুঁকছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনার মান ভালো। ফলে শিক্ষার্থী কমছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।

যশোরের বেনাপোলে খোঁজ নিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল পৌরসভায় ও ইউনিয়নে ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। আর কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে ২৭টির অধিক। যে কারণে এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকগুণ বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, বেনাপোলের কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কম। অন্য শ্রেণিগুলোও প্রায় ফাঁকা ছিল। শিক্ষকরা জানালেন, বিদ্যালয়ে এখন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। সব বইও এখনো বিতরণ করা হয়নি। এ কারণে উপস্থিতি কম।

আরও পড়ুন:

একই চিত্র দেখা গেলো নারায়ণপুর নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। খবর নিয়ে জানা যায়, এ বিদ্যালয়ে নতুন ভর্তিসহ এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৯৪ জন।

সরকারি স্কুলে অনাগ্রহ, চাপ বাড়ছে কিন্ডারগার্টেনে

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়টি ছোট একটি গ্রামে অবস্থিত। এখানে এমনিতেই ছাত্রছাত্রী কম। তার ওপরে আছে কিন্ডারগার্টেনের চাপ। এখন নতুনভাবে চাপ তৈরি করছে ইসলামি কিন্ডারগার্টেনগুলো। সেখানে দ্বীনি শিক্ষার সঙ্গে ক্যাডেট চালু হওয়ায় অভিভাবকরা ওইদিকে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে অভিভাবকদের ভাষ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় তদারকির অভাব রয়েছে। এর বিপরীতে কিন্ডারগার্টেনে তদারকি ও আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। আছে জবাবদিহিতার সুযোগ। এজন্য তারা সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে পড়তে দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

সাইবুর রহমান নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন আছে, খেলার মাঠ আছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকও আছেন। কিন্তু পড়ালেখার মানের প্রশ্নে অভিভাবকদের সন্তুষ্টির অভাব আছে। শিক্ষকরা নিয়মিত ও যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। ক্লাসে পাঠদানের বিষয়ে আন্তরিক ন। এসব কারণে কিন্ডারগার্টেনে আগ্রহ বাড়ছে।’

আরও পড়ুন:

সোনিয়া খাতুন নামের আরেকজন বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনে যেভাবে যত্ন নিয়ে পড়ানো হয়, প্রাথমিকে বিদ্যালয়ে তা হয় না। এজন্য অভিভাবকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে কিন্ডারগার্টেনে তাদের সন্তানদের পড়ান।’

তবে এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলী। তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানের ওপর ব্যাপক তদারকি রয়েছে। শিক্ষা প্রশাসন এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করায় সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।’

সরকারি স্কুলে অনাগ্রহ, চাপ বাড়ছে কিন্ডারগার্টেনে

বেনাপোল বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি সাজানো-গোছানো এবং পরিপাটি। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের শৌচাগার পর্যন্ত ঝকঝক করছে। বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলও ভালো। তারপরও কেন শিক্ষার্থী বাড়ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনে অভিভাবকদের বেশি আগ্রহের কারণ সময়সূচি। কিন্ডারগার্টেনে ক্লাস টাইম দুই সর্বোচ্চ চার ঘন্টা। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চার থেকে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় পাঠদান করানো হয়। এটা শিশুদের জন্য কষ্টদায়ক। বেশিরভাগ সচেতন অভিভাবক এটা পছন্দ করেন না।’

গতবছর কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৩৩৭ জন। বছরের ব্যবধানেও এ বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী বাড়েনি। অথচ একই এলাকায় অবস্থিত কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিক্ষার্থী বেড়েই চলেছে।

আরও পড়ুন:

কাগজপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভিন বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কিন্ডারগার্টেনমুখী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বেশিরভাগ অভিভাবকই মনে করেন, তাদের সন্তান কিন্ডারগার্টেনে না পড়লে তারা সমাজে সম্মানের সঙ্গে পরিচয় দিতে পারবেন না।’

এ বিষয়ে কথা হয় শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আমরা প্রতিমাসেই পরিদর্শনে যাচ্ছি। তারপরও কিন্ডারগার্টেনের সঙ্গে অঘোষিত প্রতিযোগিতায় থাকতেই হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হচ্ছে। বাচ্চাদের বইয়ের চাপ কম, যদিও সময় একটু বেশি নিয়ে পড়ানো হয়। তবে সামনের দিনে বাচ্চাদের টিফিনের ব্যবস্থা করা হবে।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।