পৌরসভার প্রশ্রয়ে ফুটপাতজুড়ে অবৈধ দোকান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৩:১৯ পিএম, ১১ মার্চ ২০২৫

মৌলভীবাজার পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলোর দু’পাশের ফুটপাতের সিংহভাগ দখল করে চলছে অবৈধ বাণিজ্য। এতে চলাফেরা করতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। দীর্ঘদিন এভাবে চললেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। উল্টো চাঁদা উত্তোলনের মাধ্যমে ফুটপাতে এসব দোকানের বৈধতা দিচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত ১০.৩৬ বর্গ কিলোমিটারের এ-গ্রেডের জেলা পৌর শহরটিতে ফুটপাত রয়েছে ৬.৫০ কিলোমিটার। তবে এর অধিকাংশই রয়েছে অস্থায়ী দোকানদারদের দখলে। ভবন কিংবা মার্কেট মালিকরা নিজেদের মালিকানায় থাকায় ফুটপাত দখল করে সেখানে ছোটখাটো অস্থায়ী দোকান ভাড়া দিয়েছেন।

শহরের পশ্চিমবাজার, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, সাইফুর রহমান সড়ক, আদালত সড়ক, শমসেরনগর সড়ক, টিসি মার্কেট এলাকা, কুসুমভাগ, বেড়ীরপার, সদর হাসপাতাল এলাকা ও শ্রীমঙ্গল সড়কসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, পথচারীদের চলাচলের জন্য রাখা ফুটপাত দখলের কারণে সড়কে তৈরি হচ্ছে যানজট তৈরি হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করছেন পথচারীরা।

অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভার ফুটপাত দখলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হলেও এ নিয়ে নির্বিকার পৌর কর্তৃপক্ষ। দখলকারীদের উচ্ছেদ না করে প্রতিদিন পৌরসভার নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। নামমাত্র রসিদ দিয়ে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যান থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

পৌরসভার প্রশ্রয়ে ফুটপাতজুড়ে অবৈধ দোকান

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের কুসুমভাগ পয়েন্ট থেকে পেট্রলপাম্প এলাকার ঢাকা-সিলেট সড়কের পাশের ফুটপাত দখল করে শতশত ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ির ওপর বসেছে ফল, শাক-সবজি, বিস্কুট, কাপড়সহ নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। এসব দোকানে দিনের বেলায় বেচাকেনা কম হলেও সন্ধ্যার পর থেকে বিক্রি বাড়তে থাকে। ক্রেতাদের ভিড় থাকায় পথচারীদের চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। নানা প্রয়োজনে শহরে আসা লোকজনকে বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

দীর্ঘদিন চলা এ অনিয়ম একরকম নিয়মে পরিণত হয়েছে। অস্থায়ী দোকানের পাশাপাশি সড়কের বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড। সারি সারি সিএনজিচালিত অটোরিকশার কারণে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকছে।

জানা যায়, শহরের কুসুমভাগ এলাকার ঢাকা-সিলেট সড়কের দু’পাশে দুইশতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। আছে মাছের হাটও। এসব ভ্রাম্যমাণ প্রতিটি দোকান থেকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার নাজমুল ইসলাম নামে পৌর কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক মেয়র ফজলুর রহমান এর সময় থেকে এভাবে টাকা উত্তোলন হয়ে আসছে। তবে ৫ আগস্টের পর কিছুদিন অর্থ আদায় বন্ধ থাকলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে ফের শুরু হয়েছে।

টাকা আদায়ের দ্বায়িত্বে থাকা পৌরসভার প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম জানান, শুধু নভেম্বর মাসে কুসুমভাগ এলাকার ফুটপাত থেকে আদায় করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা।

পৌরসভার প্রশ্রয়ে ফুটপাতজুড়ে অবৈধ দোকান

পৌরসভার দ্বায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উত্তোলিত অর্থ পৌরসভার রাজস্ব খাতে জমা হয়।

শহরের কুসুমভাগ এলাকার পেট্রোল পাম্পের সামনের সড়কের ওপর দীর্ঘদিন ভ্যানে ফল বিক্রি করা জালাল মিয়া নামে জানান, সাপ্তাহে দুইদিন ২০০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে পৌরসভার প্রতিনিধি নিয়ে যায়। ফুটপাতে যারা ব্যবসা করছেন সবাইকে এভাবে টাকা দিতে হয়।

মৌলভীবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুর রহমান বলেন, নাজমুল পৌরসভার অফিস সহকারী। তিনি অর্থ উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করছেন। এই অর্থ পৌরসভার কোষাগারে জমা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ বলেন, ফুটপাত থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শহরের ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওমর ফারুক নাঈম/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।