সেতুর দুই পিলার বসিয়ে সোয়া দুই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৫:১৩ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৫
মানিকগঞ্জের ঘিওরে সেতুর দুটি পিলার আর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেই সোয়া দুই কোটি টাকা উত্তোলন করে পালিয়েছেন ঠিকাদার

মানিকগঞ্জের ঘিওরে সেতুর দুটি পিলার আর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেই সোয়া দুই কোটি টাকা উত্তোলন করে পালিয়েছেন ঠিকাদার। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জিডিপি-৩ এর আওতায় তিন কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৪০ টাকা বরাদ্দে ঢাকা-আরিচা ন্যাশনাল হাইওয়ে বাঠইমুড়ী বাজার ভায়া বানিয়াজুরী ইউপি সড়কের ১৬১০ মিটার চেইনেজে ৫৬ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ পায় খান এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড মাকসুদ ইঞ্জিনিয়ারিং নামের যৌথ প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরুর তারিখ ছিল ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় আরও ২০২৪ সালের ২০ মে পর্যন্ত সময় পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে কাগজে-কলমে অধৈক কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৬ টাকা উত্তোলন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা।

স্থানীয়রা জানান, দেড় বছর ধরে দুটি পিলার আর দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে ঠিকাদারের লোকজন এলাকা থেকে চলে যান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক দেশ ছেড়ে চলে যান।

সেতুর দুই পিলার বসিয়ে সোয়া দুই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার

সরেজমিন দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদ সড়কটি। ইমন নামের একজন পথচারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে আমরা ঘিওর উপজেলায় যাতায়াত করি। এই রাস্তাটাই সহজ রাস্তা। অনেক দিন ধরে এই তারাইল ভাঙ্গায় ব্রিজ হবে শুনছি কিন্তু দেড় বছর ধরে পিলার করে লোকজন চলে গেছে কিন্তু আর আসেনি। আমাদের যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়।’

তাড়াইল গ্রামের কৃষক আরমান মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এই চকে (এলাকায়) তিন বিঘা জমিতে সরিষা ও দুই বিঘা পেঁয়াজ চাষ করেছি। এই জায়গা দিয়েই সেসব ফসল হাটে নেই। এখন পানি নেই, যাতায়াত করতে পারি। কিন্তু বর্ষার সময় পানি জমল হাট-বাজারে যাওয়া আসা খুব কষ্ট হয়ে যায়।
সেতুটি আমাদের জন্য খুব দরকার।’

কেল্লাইকাগজর গ্রামের রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, এলজিইডি অফিসের কেউ ভুলেও এই তাড়াইল গ্রামের দিকে আসেন না। সেতুটির কাজ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতো যদি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে এলজিইডি চাপ দিতো। সেতুর কাজ হবে কি-না আল্লাহ জানে।

সেতুর দুই পিলার বসিয়ে সোয়া দুই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড মাকসুদ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মাকসুদ হোসেন আত্মগোপনে থাকায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহেনুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সেতুটির বিলের বিষয়ে কিছু জানি না। আগের ইঞ্জিনিয়ার বিল দিয়ে গেছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা সুলতানা নাসরীন বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা অফিসেও কথা বলবো। যতদ্রুত সম্ভব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ব্রিজের কাজটি সম্পন্ন শেষ করাবো।

সজল আলী/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।