‘পত্রিকায় দেখেছি মনির আওয়ামী লীগ কর্মী, তাই গ্রেফতার করেছি’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৯:৩০ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন মনির

বরিশাল সদর উপজেলার জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের তিনদিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে দলের নেতারা এর সমালোচনা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাখাওয়াত হোসেন মনির বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ১৬ এপ্রিল নগরীর নতুন বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তার পরিবারকে জানানো হয় যে, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের করা দলীয় কার্যালয় পোড়ানো মামলায় অজ্ঞাত আসামির মধ্যে সন্দেহজনক হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাখাওয়াত হোসেন মনির বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী।

গ্রেফতার মনিরের ভাই বাদল সিকদার বলেন, দুপুর ১২টার দিকে এক এসআই গাড়ি নিয়ে এসে দোকানে বলেন, ওসি স্যার আপনাকে ডেকেছেন। কারণ জানতে চাওয়ায় এসআই উত্তেজিত হয়ে যান এবং হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যাবেন বলে হুমকি দেন। পরে সেই এসআইয়ের গাড়িতে চড়ে থানায় গেলে বিকেলে জানতে পারি তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই তো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগের করা মামলায় তিনি আসামি, জেল খেটেছেন। পুলিশ এসে কোনো কিছু বললো না, কি অভিযোগ তাও জানালো না। ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সাজিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিলো।

বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আওয়ামী লীগের সময় আমরা একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সাখাওয়াত হোসেন মনির বিএনপির সক্রিয় কর্মী। এছাড়া তিনি উপজেলা বাস্তুহারা দলের আহ্বায়ক কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে পুলিশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী বলে গ্রেফতার করেছে এটা দুঃখজনক। ঘটনা জানার পরই আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে বিবৃতি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি যতদূর জানি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন মনির। এ নিয়ে স্থানীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। আমরা মনে করি সেই বিরোধের সূত্র ধরে একটি মহল পুলিশকে ব্যবহার করে মনিরকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।

বাস্তুহারা দল বরিশাল জেলার আহ্বায়ক মিলন মুন্সী বলেন, সাখাওয়াত হোসেন মনির আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়ে মামলার আসামি হন। ওই সময় বেশ কয়েকবার তিনি কারাবরণও করেন। বিএনপির এই পরীক্ষিত কর্মীকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে এখন আবার পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালো। পুরো ঘটনা একটি চক্রান্ত।

এ বিষয়ে মামলার বাদী বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, সাখাওয়াত হোসেন মনির হয়তো কোনো চক্রান্তের শিকার। যেহেতু এখন তিনি জেলে, আগে জেল থেকে বের হোক, তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলাম বলেন, সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে বেড়িয়ে আসবে তার সম্পর্ক। রাজনৈতিক মামলাটি অনেক বড় একটি মামলা। তবে এটুকু বলবো, মামলায় কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।

বিষয়টি নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ দেখেছি যে সাখাওয়াত হোসেন মনির আওয়ামী লীগের কর্মী। তিনি আসলে কোন দলের তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা পত্রিকায় দেখে তাকে গ্রেফতার করেছি।

শাওন খান/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।