ভিজিডির বরাদ্দে দুর্গন্ধযুক্ত চাল, গুদামে তালা উপকারভোগীদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ১৯ জুন ২০২৫

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ভিজিডির বরাদ্দে দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা চাল বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন সুবিধাভোগীরা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের ৩৬০ জন দুঃস্থ ও অসহায় ভিজিডির কার্ডধারীদের মাঝে চাল বিতরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এসময় দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত ও পচা চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এসময় পচা ও নিম্নমানের চাল পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুবিধাভোগীরা। পরে তাৎক্ষণিক তারা বিতরণ বন্ধ করে চাল রাখার গোডাউনে তালা দেন।

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের ৩৬০ জন দুঃস্থ ও অসহায় প্রত্যেকের জন্য প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত ঈদের আগে ওই ইউনিয়ন পরিষদ গোডাউন থেকে চাল উত্তোলন না করায় চলতি মাসে দুইবারের চাল একসঙ্গে উত্তোলন করে পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের ভিজিডির কার্ডধারীদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। তিন চারজন সুবিধাভোগীর পাওয়া চাল খাওয়ার অযোগ্য দেখে প্রতিবাদ করেন। পরে তারা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে চাল বিতরণের গোডাউনে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেন। পরে উপজেলা গুদাম কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক ঘটনাস্থলে যান। চালগুলো পরিবর্তন করে ভালো চাল বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিলে সুবিধাভোগীরা চলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী আয়নাল হোসেন বলেন, ‘লালচে, দুর্গন্ধযুক্ত ও অনেকটা পচা এই চাল মানুষ কেন পশুরও খাওয়ার অযোগ্য। খাওয়ার অযোগ্য চাল সরবরাহের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে যারা খেলছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

সুবিধাভোগী দুদু মিয়া বলেন, ‘যে চাল গরুও খাবে না, সেগুলো হামারে কাছে দিচ্ছে। এগুলো খালে অসুখ হবে। পচা চাল হামরা নিব না।’

ভিজিডির বরাদ্দে দুর্গন্ধযুক্ত চাল, গুদামে তালা উপকারভোগীদের

সখিনা বেগম বলেন, ‘যে চাউলগুলো দিচ্ছে, কেমন করি এগ্যা চাউল খামো? ভাত পাক করলে ট্যাঙ্গা লাগবে।’

হান্নান প্রমানিক বলেন, ‘হামাক পচা চাল দিতে ধরছিলো । আমি নেই নাই। গ্যাদা-গ্যাদিক খিলানো দুরের কথা ভেড়াক খিলালোও অসুধ ধরবে।’

ফজলুপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মুক্তার প্রমানিক বলেন, ‘খাদ্যগুদাম থেকে চালের বস্তা সরবরাহ করা হয়। সব বস্তা দেখে নেওয়া সম্ভব হয় না। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা মোরশেদ কয়েক বস্তা চাল ভালো দেখিয়ে সব চাল পচা দিয়েছে। আমি বুঝতে পারিনি। পরে শুনলাম জিআর আর কাবিটার পুরাতন চাল কিনে নেয়। এগুলো এক চালকলের নামে সেগুলো সরকারের কাছে বিক্রি করে। চার-পাঁচ বছর ধরে তিনি এসব করছেন। যে চাল পাঁচ-ছয় বেচা দেওয়ার পর আর গুদামে রাখা সম্ভব হয় না, সেগুলো এভাবে তিনি চালিয়ে দিয়ে আসছেন।’

ফুলছড়ি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো.গোলাপ মোস্তফা বলেন, ‘খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি-এলএসডি) সঙ্গে কথা বলেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোরশেদ বলেন, ‘আরে তোমরা তো বুঝেন না। চরের মানুষ লাল চালের ভাত খাতে পছন্দ করেন। তাই ওমাহরকের জন্য এগুলো বরাদ্ধ রাখছম। তোমরা যেল্লা মনে করেন, ওল্লা নয়। চাল ভালো।’

এ বিষয়ে জানতে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আনোয়ার আল শামীম/এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।