চাঁপাইনবাবগঞ্জের দড়ির খাটলা নজর কেড়েছে অভিজাতদের

সোহান মাহমুদ সোহান মাহমুদ , চাঁপাইনবাবগঞ্জ চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ৩০ জুন ২০২৫
তরুণ উদ্যোক্তার হাতের ছোঁয়ায় দড়ির তৈরি খাটলা জায়গা করে নিয়েছে অভিজাত বাড়ির ড্রয়িংরুমে। ছবি-জাগো নিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দড়ির খাটলা কয়েক যুগ আগেও সাধারণত গ্রামের বাড়িতে ব্যবহৃত হতো। তবে এখন আর তেমন দেখা যায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামের এ সাধারণ আসবাবপত্রই এখন হয়ে উঠেছে অসাধারণ। তরুণ উদ্যোক্তার হাতের ছোঁয়ায় এই খাটলা জায়গা করে নিয়েছে অভিজাত বাড়ির ড্রয়িংরুমে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্রফেসর পাড়া মহল্লার বাসিন্দা আব্দুস সালাম শ্যামল। ২০ জনের বেশি শ্রমিক নিয়ে শহরের আলিনগর এলাকায় গড়ে তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী দড়ির খাটলার কারখানা। এই কারখানা থেকে মাসে অন্তত সাত লাখ টাকার খাটলা বিক্রি করছেন তিনি।

আব্দুস সালাম শ্যামল জানান, তার কারখানায় প্রায় ৪০ ধরনের দড়ির খাটলা তৈরি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিক্রি হচ্ছে এসব খাটলা। পৌঁছে যাচ্ছে সারাদেশে। তবে দড়ির খাটলার চাহিদা বেশি ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে। ডিজাইন ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ হয় দাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দড়ির খাটলা নজর কেড়েছে অভিজাতদের

কারখানার মালিক আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমার এই উদ্যোগ। আশা করছি অনলাইনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারবো এই খাটলা।

শ্যামল বলেন, ঐতিহ্যবাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের খাটলার নামটি পরিবর্তন করিনি। কারণ এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারও মানুষের স্মৃতি। তবে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাটলার সাইজ পরিবর্তন করেছি, যাতে করে শহরের যে কোনো ছোট বড় রুমে রাখা যায়।

আরও পড়ুন:

দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই খাটলার সাইজ অনুযায়ী দাম পড়ে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে মাচিয়াগুলোর (মাচা) দাম কম হয়। কারণ এগুলোর সাইজ ছোট।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দড়ির খাটলা নজর কেড়েছে অভিজাতদের

আব্দুস সালাম শ্যামলের কারখানায় রয়েছেন দক্ষ কর্মীরা। যত্নসহকারে খাটলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। শরিফুল নামের একজন কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘এই কারখানায় কাজ করতে পেরে আমার ভালো লাগে। কারণ কাজ তেমন কষ্টের নয়। খুব সহজেই দড়ি দিয়ে বুনে তৈরি করা যায় খাটলা।’

‘দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছিল খাটলার প্রচলন। তবে এখন অনেকে এই খাটলাকে নতুন রূপ দিয়ে বাজারে এনেছেন। এটি খুশির খবর। তবে উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করলে নতুন যুবকরা এটিকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনার মোড় এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন ৪০ বছর আগে বিয়ে করি, তখন আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে খাটলা পাঠিয়েছিল। সে খাটলা অন্তত ২০ বছর ব্যবহার করেছি। শুয়ে-বসে খুব ভালো লাগে। কিন্তু এখন এসব আর দেখা যায় না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দড়ির খাটলা নজর কেড়েছে অভিজাতদের

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সন্তান বাইরুল ইসলাম। ব্যাংকের চাকরির সুবাদে বসবাস করেন রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায়। নিজে ফ্ল্যাট কিনতে না পারলেও স্ত্রীসহ থাকেন অভিজাত বাড়িতেই।

বাইরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে দড়ির খাটলায় শুয়েছি। তখনকার স্মৃতি এখনো ভুলিনি। তাই অনলাইনে দেখে শ্যামলের কাছে কিনেছি তিন ধরনের খাটলা।’

তিনি বলেন, ‘তিনটি খাটলায় আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এসব খাটলা আমি আমার ডাইনিং রুমে রেখেছি। একটি বেলকনিতেও আছে। মাঝে মাঝে ডাইনিং রুমের খাটলায় শুয়ে-বসে থাকি, ভালো লাগে। মায়ের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। যদিও মা বেঁচে নেই। তার স্মৃতি আগলে রেখেছি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দড়ির খাটলা নজর কেড়েছে অভিজাতদের

দ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওহেদ বলেন, ‘দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছিল খাটলার প্রচলন। তবে এখন অনেকে এই খাটলাকে নতুন রূপ দিয়ে বাজারে এনেছেন। এটি খুশির খবর। তবে উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করলে নতুন যুবকরা এটিকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারবে।’

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।