বিএনপি-যুবদলের দ্বন্দ্বে ছাত্রদল নেতা খুন, গ্রামজুড়ে লুট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, ০৯ জুলাই ২০২৫

দুই গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তারের জেরে ছাত্রদল নেতা সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডে পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঠালকান্দি এখন এক ভুতুড়ে গ্রামে পরিণত হয়েছে। প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে বাড়ি, চলছে অবাধে লুটপাট। গ্রেফতার এড়াতে এবং পাল্টা হামলার ভয়ে গ্রাম ছেড়েছে অন্তত শতাধিক পরিবার। তাদের কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, আবার কারও ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।

সরেজমিনে জানা যায়, নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোল্লা গোষ্ঠীর মোতাহার মিয়া ও যুবদলের সভাপতি উল্টা গোষ্ঠীর মো. গিয়াস উদ্দিনের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে গত শনিবার (৫ জুলাই) দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোল্লা গোষ্ঠীর মো. সোহরাব মিয়া নিহত হন।

বিএনপি-যুবদলের দ্বন্দ্বে ছাত্রদল নেতা খুন, গ্রামজুড়ে লুট

সোহরাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন উল্টা গোষ্ঠীর বেশ কিছু বাড়িঘরে হামলা চালায়। এসময় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালানো হয়। হামলাকারীরা গোয়ালের ১২টি গরু ও কৃষকের গোলা থেকে প্রায় এক হাজার মণ ধানও নিয়ে যায়।

শুধু ঘরবাড়িই নয়, হামলাকারীদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি চাতলপাড় বাজারের ছয়টি দোকানও। এর মধ্যে চালের আড়ত, মোবাইল ও বিকাশের দোকান, রড-সিমেন্টের দোকান এমনকি ফ্রিজের একটি শো-রুমও রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, এসব দোকান থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। গত তিনদিন ধরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে চলেছে কাঠালকান্দি গ্রামে বেশকিছু বাড়িঘরে। এই আতঙ্কে শতাধিক পরিবার গ্রামছাড়া হয়েছে। পুরুষশূন্য রয়েছে বাড়িগুলো।

বিএনপি-যুবদলের দ্বন্দ্বে ছাত্রদল নেতা খুন, গ্রামজুড়ে লুট

সাফিয়া বেগম নামে এক নারী অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। কিন্তু মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন আমার ঘরটা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার একটা ছেলে। সে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এই ঘরটা তুলেছিল। আজ আমার সব শেষ।

অন্তঃসত্ত্বা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি অসুস্থ। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গলা থেকে স্বর্ণালংকার লুট করে ঘরে থাকা সব নিয়ে গেছে। এমনকি আমার ওষুধগুলোও নিয়ে গেছে। বার বার বলার পর আমার হাত-পা বেঁধে রেখে চলে যায়।

চাতলপাড় বাজারের ব্যবসায়ী হামজা, তার দোকানও লুট হয়েছে। তিনি জানান, তার দোকানে থাকা নগদ ২৫ লাখ টাকা ও রড-সিমেন্টের দোকানের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।

বিএনপি-যুবদলের দ্বন্দ্বে ছাত্রদল নেতা খুন, গ্রামজুড়ে লুট

চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোহরাব খান বলেন, এই বাজারে আমারও ব্যবসা আছে। বাজারটিতে এখন নিরাপত্তা নেই। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো অভিযোগ এনে মোল্লা গোষ্ঠীর মোতাহার হোসেন বলেন, আমি নিজে স্থানীয় বাজারের সভাপতি। উল্টা গোষ্ঠীর লোকজন নির্মমভাবে সোহরাবকে হত্যা করেছে। তারা বাড়িঘর ও বাজারে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। নিজেরাই নিজেদের দোকানপাট ভাঙচুর করেছে।

চাতলপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা এখন নেই। আমাদের জনবল কম, তাই অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দলও পরিদর্শন করে গেছে। কতগুলো বাড়িঘরে লুটপাট হয়েছে তার সঠিক হিসেব এখন দেওয়া যাচ্ছে না। বাজারের কিছু দোকান লুটপাট হয়েছে।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।