শেরপুরে বাঁধে ভাঙন, ১২ গ্রাম প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:৩১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

বগুড়ার শেরপুরের কাটাখালী বাঁধের ৫০ ফুট পানির স্রোতে ভেসে গেছে। এতে শেরপুর ও ধুনট উপজেলার অন্তত ১২ গ্রাম পানিতে ভেসে গেছে।

পানিতে ভেসে গেছে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চকধলী, চককল্যাণী, কল্যাণী, জয়নগর, জয়লাজুয়ান, বেলগাছি, জোড়গাছা ও আউলাকান্দির সঙ্গে ধুনট উপজেলার পেঁচিবাড়ি, জালশুকা, বিশ্বহরিগাছা ও ভুবনগাতি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি সড়কের পাশের গাছপালা ও দোকানঘর ভেসে গেছে।

এদিকে ধসে যাওয়া বাঁধের ওই স্থানটিতে স্থায়ীভাবে একটি স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছে উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা।

চককল্যাণী গ্রামের আনোয়ার, কাশেম, রফিক, সোহাগ, এজাজসহ অনেকে বলেন, বর্ষার সময় এ বাঁধ সংস্কার করার পরিকল্পনা ছিল ‘অপরিকল্পিত’। শুষ্ক মৌসুমে কাজটি করা হলে বাঁধ ধসের ঘটনা ঘটত না। সরকারের টাকাও অপচয় হতো না। বাঁধ সংস্কারের সময় অপরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়েছিল। ওই পাইপ দিয়ে দক্ষিণ পাশে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় বাঁধটি ধসে পড়ে।

জয়লাজুয়ন গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম জানান, ‘একটা সময় শেরপুর ও ধুনট উপজেলার বিলজয় সাগর, জয়লা জুয়ান, আওলাকান্দি, জালশুকা, কইগাতী, যুগিগতি, রুদ্রবাড়িয়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষ বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারতেন না। উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামের কাটাখালী খাল দিয়ে বন্যার পানি ঢুকে এলাকা তলিয়ে যেত। বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় ওই এলাকার মানুষের সেবায় ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন আমেরিকার নাগরিক ব্রাদার উইলিয়াম। তিনি নব্বইয়ের দশকে ধুনট উপজেলা পেঁচিবাড়ি থেকে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামে বাঙ্গালী নদীর দক্ষিণ পাশে কাটাখালী বাঁধ নির্মাণ করেন।

স্থানীয়রা বলেন, ‘১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বাঁধের দক্ষিণ পাশের ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের মধ্যে প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়। গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় ওই পাইপ দিয়ে পানি প্রবাহ শুরু হলে বাঁধটি ধসে পড়ে। অপরিকল্পিতভাবে এ পাইপ বসানোর কারণে এই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছেন।

সুঘাট ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূরনবী মণ্ডল বলেন, ‘গত মার্চে কাজ শুরু হলে বর্ষায় বাঁধটি ধসে যেত না। অপরিকল্পিতভাবে কাজ করায় এ অবস্থা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাটাখালী বাঁধে একটি স্লুইচগেট নির্মাণের জন্য বেশকিছুদিন আগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো তার কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই এলাকাবাসী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। টেকসই বাঁধ নির্মাণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশিক খান বলেন, ‘উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন।’

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘কাটাখালী বাঁধের ভাঙনস্থল আমরা পরিদর্শন করেছি। বাঁধটি যেহেতু খালের মুখে তাই ভাঙনস্থল বন্ধ করে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। স্থানীয়রা চাইছেন এর স্থায়ী সমাধান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমরা স্থায়ী ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিব।’

এলবি/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।