শহীদের কবর বাঁধাই করতে গিয়ে পাওয়া গেলো কালো জাদুর পুতুল-চিঠি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ২৮ জুলাই ২০২৫

কালো জাদু, ব্ল্যাক ম্যাজিক, কুফরি কালাম বা তাবিজ করা এসব শব্দ শুনলেই ভীত হয়ে পড়ে যেকোনো মানুষ। কালো জাদু বলতে বোঝায়, শয়তান বা অতি প্রাকৃতিক কিছুর সন্তুষ্টির মাধ্যমে কারও অনিষ্ট করা, কাউকে বিপদে ফেলা, ব্যক্তির উদ্দেশ্য হাসিল করা। অঞ্চলভেদে এই চর্চার বিভিন্ন নাম। যেমন ভুডু, তন্ত্রমন্ত্র, কুফরি কালাম, বান মারা ইত্যাদি।

এমন এক কালো জাদুর রহস্যময় কিছু জিনিস পাওয়া গেছে নরসিংদীতে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গতবছর ১৮ জুলাই নরসিংদী শহরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তাহমিদ ভূঁইয়া তামিম (১৫) নামে এক শিক্ষার্থী। পরে শহীদ তাহমিদকে সদর উপজেলার চিনিশপুর পূর্বপাড়া সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার স্মৃতি ধরে রাখতে কবর বাঁধানোর কাজ শুরু করে সরকার।

তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (২৭ জুলাই) কবর বাঁধানোর জন্য শ্রমিকরা চিনিশপুর কবরস্থানে কাজ করতে যান। সেখানে তাহমিদের কবরের চারপাশে ইটের গাঁথুনি করার জন্য মাটি খুঁড়তে থাকেন। কবরের পায়ের পাশ দিয়ে মাটি খোঁড়ার সময় শ্রমিকদের কোদালে কিছু একটা লাগে। এসময় তারা সেটা বের করে দেখতে পান পলিথিন জাতীয় কিছু একটা দিয়ে মোড়ানো। পরে কৌতূহলী শ্রমিকরা সেটা খুলে দেখতে পান এটার ভেতর একটি পুতুল, পিন এবং একটি কাগজে কিছু লেখা ও ছবি আঁকা। কাগজে কিছু বাংলা এবং অন্য ভাষায় বিভিন্ন কিছু লেখা রয়েছে। তাতে বাংলায় লেখা রয়েছে ‘তাসলিমার মেয়ে তানজিনার বিচ্ছেদ, তাহার এর ছেলে উজ্জল এই দুজনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হোক। তানজিনা উজ্জলকে শত্রু মনে করুক, তানজিনা উজ্জল এর মধ্যে তালাক হয়ে যাক’। পরে শ্রমিকরা প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলে মাটি খোঁড়া বন্ধ করে ফিরে যান। তবে এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।

আলতাফ মাহমুদ নামে একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু চর্চা হয়ে আসছে আদিকাল থেকেই। কালো জাদুর কাজে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন বস্তু বা প্রাণী। যেমন: পাখি, মাছ, ছাগল, পুতুল, মূর্তি ইত্যাদি। যাকে লক্ষ্য করে কালো জাদু করা হয়, তার ব্যবহৃত পোশাকের অংশ, নখ, চুলসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন তাবিজ-কবচ কাক, প্যাঁচা, ডাহুক-জাতীয় পাখি বা মাছের শরীরের ভেতর ভরে কার্যসিদ্ধ করা হয়। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে, এই তাবিজ-কবচ পুড়িয়ে ফেলা বা লেখা-জাতীয় জিনিস পানিতে ভিজিয়ে মুছে ফেলা। পাশাপাশি আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজেদের চারপাশে তান্ত্রিক, কবিরাজ এবং সন্দেহজনক মানুষের ওপর নজর রাখতে হবে। কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে যেন সঙ্গে সঙ্গেই আই শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া যায়।

এ ব্যাপারে শহীদ তাহমিদের বাবা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কবরের চারপাশে শ্রমিকরা যখন কাজ করতে থাকে, তখন কবরের পাশে মাটির নিচ থেকে কালো জাদুর এগুলো পাওয়া যায়। ইসলামের বিধান অনুযায়ী কালো জাদু করা ঠিক না। যারা করেছে তারা অমানবিক কাজ করেছে। কবরস্থানকে পুঁজি করে কুফুরি, জাদুটোনা ইত্যাদি করা খুবই জঘন্য খারাপ কাজ। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

সঞ্জিত সাহা/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।