নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে পারে, দেশে এমন সন্তানের জন্ম হয়নি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৫
নরসিংদী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম আনোয়ার

চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে নরসিংদী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম আনোয়ার বলেছেন, চাকরিজীবনে একটি অবৈধ পয়সা নিয়েছি প্রমাণ দিতে পারলে চাকরি ছেড়ে কামলা দেবো। এমনকী টাকা দিয়ে হলেও কেউ তাকে কিনতে পারবেন না চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেছেন, টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে পারে, বাংলাদেশে কোনো মায়ের গর্ভে এমন সন্তানের জন্ম আজও হয়নি।

সোমবার (২৮ জুলাই) ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম আনোয়ার।

‘মহান চান্দা-ভাইগণ’ সম্বোধন করে চাঁদাবাজদের উদ্দেশে শামীম আনোয়ার লেখেন, ‘প্রিয় চান্দা-ভাইয়েরা, নরসিংদীতে আমরা আপনাদের দুই সহযোগী প্রকাশ্য চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেফতার করায় আপনাদের আঁতে ঘা লেগেছে। আমাকে থামাতে নানামুখী আয়োজনও চলছে আপনাদের। লোভ-লালসা থেকে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন, বাদ যাচ্ছে না কোনোটাই।’

তিনি আরও লেখেন, “হয়তো ভাবছেন, পুলিশ অফিসারেরা অমন আওয়াজ টুকটাক দেয়-ই। বান্ডিলের প্রত্যাশা জানান দেওয়া আরকি! হয়তো মোটা কলেবরের ‘কিছু’ পকেটে পুরে দিলেই টুপ করে চুপ মেরে যাবে। যারা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে পয়সার লোভ দেখিয়ে আমাকে থামাতে চান, তারা দয়া করে আমার চাকরিজীবনের ইতিহাসে একটু নজর বুলিয়ে নেবেন। নরসিংদীতেও আমার গত ৮/৯ মাসের কর্মকালে ওসি, এসআই থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এক কাপ চা-ও খাওয়াতে পেরেছেন কি না? আই লিটারেলি মিন— ‘এক কাপ চা’। প্রমাণ লাগবে না, কেউ মুখে হলেও বলুক।”

শামীম আনোয়ার বলেন, ‘শুধু এটুকুই বলবো, টাকা দিয়ে আমাকে কিনতে পারে, বাংলাদেশে কোনো মায়ের গর্ভে এমন সন্তানের জন্ম অদ্যাবধি হয়নি। প্লিজ কাম টু নো। পুরো চাকরিজীবনে একটি অবৈধ পয়সা গ্রহণ করেছি প্রমাণ দিতে পারলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে কামলা দিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করবো।’

একটি গোষ্ঠী তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে পুলিশের এই কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘আমাকে আপনারা চেনেননি। আমি চাকরির মায়া করে কাজ করি না ভাই। ভবিষ্যত তো দূর অন্ত, এমনকি আগামীকালও যদি আমাকে পুলিশ থেকে চলে যেতে হয়, এ নিয়ে কখনও আমার সামান্যতম অনুশোচনাও থাকবে না। রিজিকের মালিক রাজ্জাক (আল্লাহ)। আর জেনে নিন, জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে— এ বিশ্বাস হৃদয়ের গভীরে গ্রোথিত না থাকলে চুনোপুঁটিতুল্য নগন্য এক অফিসার হয়ে আপনাদের মতো মহাপরাক্রমশালীদের সঙ্গে পাঙ্গা নিতে পারতাম না।’

তিনি বলেন, “আমার নাম করে কেউ টাকা চাইলে বা আপনারা কাউকে টাকা দিলে নিশ্চিত থাকবেন সেই টাকা প্রতারকের পকেটে গেলো। ভবিষ্যতে আবার বলবেন না যে, ‘আপনার জন্য না ওমুককে দিয়ে বান্ডিল পাঠালাম। আবার আমার লোককে ধরলেন যে!’ আবারও সতর্ক করছি, সংশোধন হয়ে যান। অন্যথায় আমি অতি নগন্য একজন অফিসার হয়ে আপনাদের মতো ক্ষমতাশালীদের প্রতিপক্ষ হতে বাধ্য হবো। মনে রাখবেন, এবারেরটা ছিল শুধু প্রাথমিক বার্তা মাত্র। পরের ধাপ আরও কঠোর হবে। আশা করি, আপনারা সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাইবেন না।’

সবশেষে তিনি নরসিংদী থেকে চাঁদাবাজি নির্মূল করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ নরসিংদীর ডিকশনারি থেকে চাঁদাবাজি শব্দটিকে বিদায় করে দেওয়া হবে.. হবে.. হবে। অতীতে যা ছিল শুধু আপনার ভাবনায়, সেসবের বাস্তব রূপদান শুরু হবে প্রাণের নরসিংদী থেকেই।’

সঞ্জিত সাহা/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।