কুপির আলোয় আলোকিত ২৫ পরিবার
`কেরোসিনের তৈরি কুপিবাতিই আমার সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা। দারিদ্র্যের কঠিন কষাঘাত থেকে দিয়েছে মুক্তি।` এভাবেই নিজের অভিব্যক্তির কথা জানালেন শিবনগর গ্রামের রাম অধিকারী।
রাম অধিকারীর মতো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামের ২৫টি পরিবার কুপিবাতির আলোয় আলোকিত হয়েছে।
রাম অধিকারী আরও জানান, তার বাবা মধুসুধন অধিকারী কর্মকারের কাজ করে সংসার চালাতেন। তার মৃত্যুর পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। ৬ ভাইয়ের মধ্যে রাম মেজো। বাবার মৃত্যুর পর টানাটানির সংসারে ভাইয়েরা কেউ তেমন একটা লেখাপড়া করতে পারেননি। তখন পরিবারের সকলের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে বড় ভাই গোপাল অধিকারী বাবার পেশা আকড়ে ধরেন।
আর তিনি অন্য ভাইদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে শুরু করেন কুপিবাতি তৈরির কাজ। প্রায় ২২ বছর ধরে বাড়ির নারী পুরুষ সকলে মিলে এ কাজের মাধ্যমে সংসারে সুদিনও এনেছেন।
এখন তাদের তৈরি কুপিবাতি নিজের জেলা ছাড়াও মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, বাগেরহাট, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চালের কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব এলাকার বড় বড় মুদি ও হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীরা তাদের বাড়ি থেকেই এ কুপিবাতি পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
সচীন অধিকারী জানান, বাজারের এ্যারোসল ইনসেক্ট, ড্যানিস, স্টারশিপ, গোয়ালিনী প্রভৃতি তরল দুধের খালি কৌটা কেটে তৈরি করেন এ কুপিবাতি। এ কৌটাগুলো ঢাকার বিভিন্ন ভাংরির বড় দোকান থেকে পাইকারি কিনে আনেন তারা। পরে এগুলো মাপ মতো কেটে তৈরি করেন কুপিবাতি বা (ল্যাম্প)।
তিনি জানান, এ্যারোসল ইনসেক্টের খালি কৌটাগুলো এ বাতি তৈরির জন্য সবচেয়ে ভাল। এর প্রতিটি কৌটা থেকে দুটি বাতি তৈরি হয়। প্রতিটি কৌটা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে। আর প্রতিটি বাতি বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়।
তিনি জানান, বাড়ির নারীরা বাতির নলের ঝালাইয়ের কাজ করে থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করলে (অন্য কেউ কুপির নল ঝালাই করে দিলে) একজন কুপি শ্রমিক ৮০ থেকে ৯০ টা কুপি তৈরি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতি একশ কুপি বাতিতে তাদের যাবতীয় খরচ বাদে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা আয় হয়।
তিনি আরো জানান, বাড়িতে তারা মোট ৭ জনে এ কুপি বাতি তৈরির কাজ করে থাকেন। আর নারীরা গৃহস্থলির কাজের ফাঁকে ঝালাইয়ের কাজে সাহায্য করেন। 
সচীন অধিকারী জানান, প্রথম যখন কুপিবাতি তৈরির কাজ তারা শুরু করেছিলেন তখন নিজেরা বিভিন্ন বাজারে নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন নিজ জেলাসহ দূর-দুরান্ত থেকে মুদি, হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীরা ছাড়াও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, তাদের দেখাদেখি এ গ্রামের আরো অনেকে বাতি তৈরির কাজ শুরু করেছেন। তাদের মহল্লায় এখন ২০-২৫টি পরিবার এ বাতি তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা নিজেরা তৈরি করে নিজেরাই বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকেন।
এসএস/এমএস