আপনারা কাঁদবেন না, গর্ব করবেন: শহীদ পরিবারকে মাহমুদুর রহমান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৫

দৈনিক আমার দেশ’র সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা মন খারাপ করবেন না। আপনাদের ছেলে-মেয়েদের গল্প সারা পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী আলোচিত হবে। আপনারা গর্ব করে বলবেন, দেশ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ছেলে, মেয়ে শহীদ হয়েছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার দেশ পাঠকমেলা কুমিল্লা জেলা কর্তৃক আয়োজিত ‘মহান ৩৬ জুলাই যোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান জুলাই আন্দোলনকে শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর এক আলোচিত বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের মর্মবাণী হলো, ‘একটা গুলি করলে একটা মরে, আরেকটা যায় না।’

তিনি বলেন, যেই মুহূর্তে আমাদের সন্তানরা মৃত্যুকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে, সেই মুহূর্তে ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ পালাতে বাধ্য হয়েছে। কারণ আমাদের তরুণরা কেবল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নয়, তারা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছে। নিরস্ত্র তরুণ-তরুণীরা এই যুদ্ধে নিজের শক্তি এবং আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে এ যুদ্ধে জয়ী হয়েছে।

তিনি বলেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগে মারা যাওয়া চেগুয়েবারাকে মহানায়ক হিসেবে জানতাম। আজকের মহানায়ক হলো আবু সাঈদ, আজকের মহানায়ক মুগ্ধ ও ওয়াসিমের মতো শহীদরা। এরা আমাদের মহানায়ক। আমাদের আর বাইরে থেকে মহানায়ক আনতে হবে না।

শহীদ পরিবারের উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, আপনাদের অনেক চাহিদা পূরণ হয়নি আমরা জানি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ‘আমার দেশ’ তার সীমিত ক্ষমতা দিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজকে কুমিল্লা পাঠকমেলা যে আয়োজন করেছে, তা আপনাদের অবদানের কাছে কিছুই না। কিন্তু আপনাদের জন্য আয়োজন করতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।

জুলাই যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ও আহতদের অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, এই মহান জুলাই না এলে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। এই মহান জুলাই সংঘটিত না হলে আমার দেশ পুনঃপ্রকাশ হতো না। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ফিরে পেত না। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পেত না।

ফ্যাসিবাদী সরকারের ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের কাছে একটা সংবাদ আসলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সেই সংবাদ আমরা ছাপাবো কি না- এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত ছিল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, নিউজ ছাপবো। সেই সংবাদ থেকেই আমার সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত লড়াই শুরু হয় এবং আমি জেনে শুনেই সেই লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলাম। আমি জানতাম এর প্রতিক্রিয়া কতটা ভয়ংকর হতে পারে।

শেখ হাসিনার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে আমরা বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশের জুডিসিয়ারি শেখ হাসিনার তদবির বাহনের ভূমিকা পালন করছে। দেশের সুপ্রিম কোর্টসহ সবাই একই কাজে জড়িত। তারা রায় দিচ্ছে ‘শেখ হাসিনা দেখতে সুন্দরী’। তখন আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লাম- এটার বিরুদ্ধে আমি লিখব কি না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, লিখব। তারপর আমি একটি আর্টিকেল লিখলাম - ‘স্বাধীন বিচারের নামে তামাশা’। এটা লেখার কারণে আমার নামে মামলা হলো, সাজা হলো, পত্রিকা প্রথমবারের মতো বন্ধ হলো- কয়েক সপ্তাহ বন্ধ ছিল। আমি এক বছর জেল খেটে বের হলাম। তারপরেও আমি আমার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কুমিল্লার ৩৯ জন শহীদ পরিবার এবং ২০ জন আহত সদস্যের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. হায়দার আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

জাহিদ পাটোয়ারী/কেএইচকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।