পরিযায়ী পাখি হত্যা, ছবি-ভিডিও পোস্ট করে বিপাকে যুবলীগ নেতা
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গুলি করে পরিযায়ী পাখি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসময় পাখিটি দেখতে স্থানীয়রা ভিড় করে। আর এসব দৃশ্যের ছবি-ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন যুবলীগ নেতা মুকুল মোল্লা। বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার শেখর ইউনিয়নের তেলজুড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, যুবলীগ নেতা মুকুল মোল্লা ভিডিও করে ছড়িয়েছেন। তাকে ধরলেই প্রকৃত অপরাধীদের ধরা যাবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার তেলজুড়ী গ্রামের চকপাড়া এলাকার একটি মোবাইল টাওয়ারে একটি পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নেয়। পাখিটির ওজন প্রায় আড়াই কেজির মতো। টাওয়ারে থাকা পরিযায়ী পাখিটিকে ইয়ারগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন খন্দকার ও মুরাদ। পরে ওই স্থানে মানুষের ভিড় লেগে যায়। এ দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন শেখর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মুকুল মোল্লা। পরে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ছবি-ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। পরিযায়ী পাখি নিধন নিয়ে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
ভিডিওতে দেখা যায়, পাখিটি গুলি করে হত্যার পর লোকজন দেখতে ভিড় জমিয়েছে। পাখিটি কেউ ধরে দেখছেন। এসময় অনেককে বলতে শোনা যায়, আল আমিন খন্দকার ও মুরাদ মোবাইলের টাওয়ার থেকে পাখিটি মেরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির শত শত পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। শিকারীরা এয়ারগান, ফাঁদ ও জাল পেতে পাখিগুলো ধরে বিক্রি করে দেয়। আর এ কাজটি তারা খুব সকালে করে থাকে। এভাবে প্রতিদিন অসংখ্য পরিযায়ী পাখি নিধন করা হচ্ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা জাফর শেখ জাগো নিউজকে বলেন, চকপাড়ার লোকজন টাওয়ার থেকে এয়ারগান দিয়ে গুলি করে বড় একটি পরিযায়ী পাখি হত্যা করেছে। তবে কারা মারছে তা বলতে পারবো না।

পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাখিটি পড়ার পর পোলাপানরা ধরে আনে। তখন অনেক লোকজন জড়ো হয়। কারা মেরেছে, কী করেছে তা জানা নেই। তবে পাখিটির ওজন দুই কেজির মতো হবে। সাইজে বেশ বড়। সম্ভবত পাখিটির নাম মদনটাক। আমি এই ধরনের পাখি প্রথম দেখলাম।’
স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) ইয়াছিন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার ওয়ার্ডে হলেও চকপাড়া এলাকার ঘটনা। এ ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত আল আমিন ও মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের এলাকায় গিয়েও পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে শেখর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মুকুল মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ময়েনদিয়া বাজারে ব্যবসা করি। রাত আটটার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে ওই স্থানে গিয়ে দেখি অনেক লোকজন, চিল্লাপাল্লা করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বড় একটি অতিথি পাখি মারা হয়েছে। পাখিটি নিয়ে সবাই টানাটানি, ছবি তোলাতুলি করছে। তখন আমি আমার মোবাইলে ছবি-ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেই। পরে পাখিটি কী হয়েছে জানা নেই। আসলে অতিথি পাখি নিধন ঠিক না। আইনগত অপরাধ। তাছাড়া আমার ছবি-ভিডিও করা উচিত হয়নি।’
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ছবি-ভিডিওটি দেখেছি। এটি আইনগতভাবে অপরাধ। এ কাজটি যারা করেছে তাদের খোঁজা হচ্ছে। এসব পাখি শিকারীদের হাতেনাতে ধরতে পারলে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এন কে বি নয়ন/এফএ/এএসএম