ফরিদপুর

ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করলেন ওটি বয়, কেটে ফেলতে হলো সংক্রমিত অঙ্গ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় অবস্থিত সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারীর (ওটিবয়) বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীর স্তন ক্যানসারের বা টিস্যু সংক্রামক পরীক্ষার (বায়োপসি) জন্য অস্ত্রোপচার মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন ওই কর্মচারী। এর ১৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রামকের কারণে একটি স্তন কেটে ফেলতে হয়েছে ওই নারীর।

ভুক্তভোগী ও তার স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করেন হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারের কর্মচারী শেখ নিয়ামুল (২৬)। ভুক্তভোগী নারী ফরিদপুর শহরতলির কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। তার ৭ বছর ও ১ বছর বয়সি দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি শহরের ঝিলটুলী এলাকার সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসার নথিপত্র ও ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ নভেম্বর পূর্ব পরিচিত ওই ওটি বয়ের শরণাপন্ন হয়ে সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানের কাছে যান ভুক্তভোগী নারী। একপর্যায়ে এই চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দেন। পরে তিনি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলেই হাসপাতালটির ওটি বয় নিয়ামুল তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না যাওয়ার জন্য বোঝান ও অল্প খরচে নিজেই কাজ করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

ভুক্তভোগী রোগী ববিতা বেগম জানান, ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পরে নিয়ামুল এসে বলে, মেডিকেলে থাকতে হবে, অনেক ঝামেলা হবে। আমি এই কাজ পারি, আমি করে দেব। কোনো সমস্যা হবে না, মেডিকেলে গেলেও একইভাবে কাটবে। তখন নিয়ামুলকে বলেছিলাম, আমার দুটি বাচ্চা আছে, কোনো ক্ষতি যেন না হয়। এক পর্যায়ে ওটি রুমে নিয়ে সে একাই অপারেশন করে।

তিনি আরও জানান, অস্ত্রোপচার শেষে চারটি সেলাই দেন ও নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷ পরবর্তীতে প্রায় ১৫ দিন পরে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পান। এরই মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পুনরায় চিকিৎসক আতিকুর আহসানের শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা খুলে বলেন। এরপর ওই চিকিৎসক সংক্রমণের ভয়াবহ মাত্রা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ফরিদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন ও একই দিনে তার সংক্রামক স্তন্যটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়।

ফরিদপুর/  ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করলেন ওটি বয়, কেটে ফেলতে হলো সংক্রমিত অঙ্গ

এ বিষয় নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান চিকিৎসক আতিকুর আহসান জানান, এ ধরনের টিস্যু সংগ্রহের জন্য চিকিৎসক দ্বারা একটি ফাঁপা সুঁচ ব্যবহার করে স্তনের পিণ্ড বা অস্বাভাবিক জায়গা থেকে কোষ বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজন অনুসারে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করে ওই ওটিবয়।

তিনি আরও বলেন, পুরো স্তন নয় সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য ওই ওটিবয় দায়ী। এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার অধিকার ওটিবয়ের নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে অভিযুক্ত নিয়ামুলের আরেক প্রতারণা দেখা যায়। পরীক্ষাটি করানো হয় ঢাকা ধানমন্ডির গ্রিনরোড এলাকার এনএন ল্যাব নামক একটি ল্যাব থেকে। রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, নমুনাটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে। তবে এর কোনো তথ্য সত্য নয় বলে পরে স্বীকার করেন অভিযুক্ত নিয়ামুল।

এদিকে রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযুক্ত কর্মচারী শেখ নিয়ামুলকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি দোষ স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সবার অজানায় সে এই কাজটি করেছে, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে ওই হাসপাতালে লোক পাঠিয়ে ঘটনার খোঁজখবর নেওয়া হবে।

এন কে বি নয়ন/এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।