সুদের টাকা আদায়ে ব্যবসায়ীর নামে আওয়ামী লীগ নেতার ১৯ মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:৪০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

সুদের ফাঁদে পড়ে একের পর এক মামলার বোঝা কাঁধে নিতে হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা ও এক ব্যবসায়ী পরিবারকে। আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে টাকা লেনদেনের পর সুদের শর্ত বদলে ১৯টি মামলা দিয়ে পুরো পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে।

মামলা ও রাজনৈতিক হুমকি থেকে রক্ষা পেতে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাতেন খাঁর মোড়ে অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আসিফ আলমগীর। তিনি রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ব্যবসা করেন। ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তার বাড়ি রাজশাহীর অক্ট্রোয় মোড়ে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য। তার একটি ভিজিটিং কার্ডে নিজেকে ঢাকার জাতীয় আইন কলেজের প্রভাষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পরিচয়ের সূত্র ধরে যোগাযোগ ছিলো তাদের মধ্যে। হঠাৎ মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি সুদের ব্যবসা করেন। লাখ প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে ওই আইনজীবীর কাছ থেকে কয়েক দফায় ২৫ লাখ টাকা নেন আসিফ আলমগীর। এসময় তার স্ত্রী নাফিসা আঞ্জুমান ঐশীর নামে ব্যাংক চেক ও ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে সই নেন। তবে কয়েক দফায় ১৩ লাখ টাকা ফেরত দেন ওই দম্পতি। কিন্তু শর্ত মোতাবেক দুই মাস সুদের টাকা দিতে পারেননি আসিফ। এরপর তাদের ওপর নেমে আসে জুলুম। মোহাম্মদ আলী লাখে ৩৫০০ টাকা সুদ দাবি করেন। এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনায় ১৯টি মামলা করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

মামলায় আসিফ আলমগীরের স্ত্রী নাফিসা আঞ্জুমান ঐশি, মা, ভাই তাদের ভাড়াটিয়া এমনকি তাদের আইনজীবীকেও আসামি করা হয়েছে। আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে এসব মামলা করছেন। এখন রাজনৈতিক মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন ওই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

সংবাদ সম্মেলন নাফিসা আঞ্জুমান ঐশী অভিযোগ করেন, আমার স্বামী ব্যবসার প্রয়োজনে রাজশাহী জেলার অক্ট্রয় মোড় এলাকার মোহাম্মদ আলীর কাছে সুদের ওপর ২০২০ সালের ১ নভেম্বর সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেন। সেখানে আমার একটি চেক ও স্ট্যাম্প জমা দেই। পরে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আরও ১ লাখ টাকা নেওয়ার সময় একটি সাড়ে চার লাখ টাকার স্ট্যাম্প সই করে দেওয়া হয়। এজন্য আগের সাড়ে ৩ লাখ টাকার স্ট্যাম্প ও চেক বাতিল করা হবে বলে জানানো হয়। পরে কয়েক দফায় মোট ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

এক লাখ টাকায় প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা সুদ নিতেন আসিফ। কিন্তু মোহাম্মদ আলীকে ২ মাস এসব টাকার সুদ দিতে না পারায়, আমার বিরুদ্ধে শুরু হয় অত্যাচার। তখন বাধ্য হয়ে ২০২৪ সালে কয়েক দফায় ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ২০০ টাকা তাকে পরিশোধ করা হয়।

টাকা পরিশোধ করলেও তিনি আমাকে চেক বা স্ট্যাম্প ফেরত দেয়নি, বরং আমার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্নভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। এখন পর্যন্ত আমি, আমার মা, শাশুড়ি স্বামীসহ বিভিন্ন স্বজনদের ওপর মামলা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী। আমি অ্যাডভোটের কাছে গেলে তার নামেও মামলা দেওয়া হয়। সবগুলো মামলার বাদি তিনি নিজেই। এখন পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৯টি মামলা করেছেন। আমাকে রাজনৈতিক মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও সুদের ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে অভিযোগ দিয়েও কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

নাফিসার অভিযোগ, সুপ্রিম কোটের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সুদের ব্যবসার নামে প্রতারণা করে আসছেন। তিনি নিজেকে ঢাকার জাতীয় আইন কলেজের প্রভাষক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে কলেজে খোঁজ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মামলাবাজ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর প্রতারণা থেকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ, আইনবিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট বাজারে। এলাকায় তার প্রভাবও বেশ। নিজ এলাকায় পরিচয় দেন ব্যারিস্টার হিসেবে।

সোহান মাহমুদ/এনএইচআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।