ধুলায় ধূসরিত মজমপুর গেট, শহরের বুকে একচিলতে মেঠোপথ
কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুর রেলগেট উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশ দ্বার। যে প্রবেশদ্বার দিয়ে দিনে কয়েক হাজার যান চলাচল করে। কুষ্টিয়া শহরের সব থেকে ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত এটি। এসব কারণে এলাকায় গড়ে উঠেছে হোটেল রেস্তোরাঁ, অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া রাজধানীগামী সব কাউন্টারের ঠাঁই হয়েছে এই মজমপুর রেলগেট এলাকায়।
অথচ এই ব্যস্ততম জনপদ আজ ধুলোর জনপদে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা সড়ক যেন পরিণত হয়েছে এক মরণ ফাঁদে। যেখানে মাঝে মধ্যেই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বাস কিংবা ট্রাক বিকল হয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। মহাসড়ক হলেও মনে হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক অবহেলিত মেঠোপথ। পথচারীদের মুখ চেপে কিংবা মাস্ক ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হয়। ধুলার কারণে ব্যাহত হচ্ছে দোকানীদের বিকিকিনিও।
বিশেষ করে খাবার হোটেলের অবস্থা আরো নাজুক। জেলা শহরের অধিকাংশ খাবার হোটেল মজমপুর গেট এলাকায় হওয়ায় প্রভাব পড়েছে এসব হোটেলে। প্রতিদিন সহস্রাধিক যানবাহনের চাপে ওই ধুলা ঢুকে পড়ছে খাবার হোটেলে। এতে একদিকে যেমন খাবারের সঙ্গে প্রবেশ করছে জীবানু সেইসঙ্গে কমছে ক্রেতার সংখ্যাও।
শহরের জাহাঙ্গীর হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কথাই ধরা যাক। ধুলাবালির কারণে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে এই অভিজাত হোটেলে। হোটেল মালিক জানিয়েছেন ধুলোর কারণে বিক্রিও কমেছে অনেক। যদিও বিকল্প ব্যবস্থায় খাবার সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাতে যে খুব একটা সমাধান হচ্ছে তা কিন্তু নয়। 
পরিবহন নিয়ন্ত্রণে যাদের দায়িত্ব সেই ট্রাফিক পুলিশই যেন সবচেয়ে বেশি অসহায়। ধুলাবালির কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। মাস্ক পরে পরিবহনের দীর্ঘ চাপ সামলাতে হচ্ছে তাদের। সকালে পরিষ্কার ইউনিফর্ম পরে ডিউটিতে আসলেও ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পাল্টে যায় চেহারা।
ট্রাফিক ইনস্পেক্টর ফখরুল ইসলাম এমন অসুবিধার কথা জানালেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখছেন না তারা। তাই নিরুপায় হয়েই তাদেরকে কর্তব্য পালন করতে হয়। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের পথ চেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায়ও যেন নেই তাদের।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ ডা. সালেক মাসুদ জানান, ধুলার কারণে শরীরে নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। বিশেষ করে লান্সে আবর্জনার স্তুপ জমে পাথরের মত স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে ফুসফুসে কাশিসহ নানা ধরনের রোগ বালাই তৈরি হয়। চিকিৎসা করেও নিরাময় সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন সড়ক সংস্কার করা হলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও রেহায় পাবে মানুষ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু সড়ক বিভাগ নয়, এগিয়ে আসতে হবে পৌর কর্তৃপক্ষসহ সকল সচেতন মহলকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ দফায় দফায় সওজ কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা খরচ করে মহাসড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নিলেও তাতে কোনো লাভ হয় না। কেননা দু`একদিন যেতে না যেতেই আবার একই অবস্থা দাঁড়ায়।
এদিকে ধুলা-বালির অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে মানববন্ধনও হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনের উদ্যোক্তা শাহরিয়ার ইমন রুবেল বলেন, শহরবাসীকে রক্ষায় আমাদের মত কিছু সংখ্যক মানুষ একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করেছি। তাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসেনি।
আল-মামুন সাগর/এফএ/এমএস