আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন : সিগন্যাল ছাড়াই চলছে ট্রেন


প্রকাশিত: ০৬:৪৮ এএম, ২৫ মে ২০১৫

পাকশী অঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ততম স্টেশন হলো নাটোরের আজিমনগর রেলস্টেশন। প্রতিদিন এ স্টেশন দিয়ে অর্ধশতাধিক ট্রেন, মালট্রেন ও মটর ট্রলি চলাচল করে। দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ এ স্টেশন দিয়েই হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে স্টেশনে স্টেশন মাস্টার না থাকার কারণে সিগন্যাল ছাড়াই ট্রেন চলাচল করছে। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ স্টেশনে ৩ জন মাস্টার, ৩ জন পয়েন্টসম্যান, ১ জন পোর্টার ও ১ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পোস্ট থাকলেও সেখানে বর্তমানে ২ জন পয়েন্টসম্যান ও ১ জন পোর্টার দিয়ে চলছে কার্যক্রম। বাকি পদগুলোও শুন্য রয়েছে। কয়েকদিন আগে স্টেশনের একমাত্র মাস্টারকেও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ফলে রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থাসহ আধুনিক অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে রেল গেটের অটোলক ব্যবস্থা এখন এনালগে পরিণত হয়েছে। ট্রেনের শব্দ শুনে ও মাথা দেখে রেল গেট বন্ধ হচ্ছে আর ট্রেন পার হলে খোলা হচ্ছে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশনের ৩ জন স্টেশন মাস্টারের মধ্যে ১ জন মাস্টার প্রায় ২ বছর আগে অবসরে চলে যাওয়ায় মাত্র ২ জন মাস্টার দিয়েই এ পর্যন্ত কার্যক্রম চলছিলো। কিন্তু এই দুইজনের একজন আফজাল হোসেন মুলাডুলি স্টেশনে ও অন্যজন মারফিন হাসানকে মাধনগর স্টেশনে বদলি করার ফলে গত ২০ মে থেকে আজিমনগর স্টেশন মাস্টার শুন্য। অফিসিয়াল হিসেবে কার্যত এ স্টেশনকে বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে ২০ মে থেকে জ্বলছে না সিগন্যাল বাতি। ফলে সিগন্যাল ছাড়াই চলছে ট্রেন।

এ ব্যাপারে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ জানান, লালপুর বাগাতিপাড়াবাসীর অভিভাবক হিসেবে এ বিষয়ে আমি ইতিমধ্যেই রেল কর্তৃপক্ষের নিকট জেনেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে ট্রেনগুলো এখন নির্ধারিত সময়ে চলছে। কাজেই স্টেশনে টিকিট বিক্রির একজন ও গেটম্যান হিসেবে একজন ছাড়া বাকি লোকের প্রয়োজন নেই। গেটম্যানের কাজের সুবিধার্থে ট্রেনের সময়সূচি সরবরাহসহ তাদের সর্বদা সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

আজিমনগর রেলগেটের গেটম্যান আশরাফ আলী জানান, সিগন্যাল বাতি না জ্বলায় গেটে খুবই সমস্যা হচ্ছে। আগে সিগন্যাল দেখে গেট বন্ধ হতো। কিন্তু এখন ট্রেনের দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে। আর দ্রুতগামী ট্রেনের ক্ষেত্রে এ সমস্য আরো প্রকট। গেট বন্ধ করতে ১-২ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ট্রেন দেখার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রেলগেটে চলে আসে।

আজিমনগর স্টেশনের পয়েন্টস ম্যান আলমগীর হোসেন জানান, স্টেশন মাস্টার না থাকায় কার্যত স্টেশন বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র স্টেশন দেখভাল করার জন্য ও টিকেট বিক্রির জন্য ২জন পয়েন্টসম্যান ও ১জন পোর্টার কর্মরত আছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক বাবুল আকতার বলেন, দেশের রেল স্টেশনগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত এ স্টেশন থেকে রেল মাস্টার ক্লোজড করে নেয়াটা আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না। এতে করে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কারণ স্টেশন সংলগ্ন একমাত্র রেল লাইনটির উপর দিয়েই এ উপজেলার লালপুর গোপালপুর হয়ে বনপাড়া ও নাটোরের চলাচলকারী যানবাহনগুলো চলাচল করে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ডিটিও (ডিভিশনাল ট্রান্সপুটেশন অফিসার) শওকত জামান জানান, স্টেশন মাস্টারের অভাবে পাকশী অঞ্চলে ৫৯ টি স্টেশন বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় সাবধানতার সঙ্গে আব্দুলপুর ও ঈশ্বরদীর মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে আজিমনগর স্টেশনে ট্রেন চলাচল করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্টেশন মাস্টারের চাহিদা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ হলে এ সমস্যা দূর হবে। কবে নাগাদ এ সমস্যা মিটবে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি দীর্ঘ ব্যাপার। তাই শিগগিরই এ সমস্যা সমাধানের কোন সম্ভাবনা নেই।

এই স্টেশনের পাশেই দেশে অন্যতম বৃহৎ সুগার মিল নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ৫ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল অবরুদ্ধ করে তৎকালীন প্রশাসকসহ ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক লোককে ব্রাশ ফায়ার করে গণহত্যা করে। সে সময় নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল প্রশাসক ছিলেন লে. আনোয়ারুল আজিম। তার নামানুসারে গোপালপুর রেলস্টেশনের নামকরণ হয়েছে আজিমনগর স্টেশন।

১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকে পহেলা ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার এ বীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে গোপালপুর রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘আজিমনগর’ নামকরণ করে। আর এই ঐতিহ্যবাহী স্টেশনে সিগন্যাল বাতি না জ্বলায় শত শত শিক্ষার্থী ও যানবহনের নিরাপত্তার সার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতিসত্বর আজিমনগর রেলস্টেশনে স্টেশন মাস্টার নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন এ অঞ্চলের জনসাধারণ।

এসএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।