বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ০৫:২৪ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
ফাইল ছবি

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদ শেখের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার ঝিকরগাছার গোয়ালহাটিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে (বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর)। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মায়ের নাম জেন্নাতা খানম।

দরিদ্র বাবা-মায়ের আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু নূর মোহাম্মদ লেখাপড়ায় বেশি দূর এগোতে পারেননি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তার শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে। এরপর ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্থান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৮ নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙ্গালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন। সঙ্গী ছিল আরও ৪ জন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। পাকবাহিনী টের পেয়ে বিপদজনক অবস্থার মুখে টহলদারী মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে।

হানাদারদের এই পরিকল্পনা বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। মারাত্মক আহত হলেন সঙ্গী নান্নু মিয়া। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হানাদারদের মর্টার শেল মারাত্মকভাবে জখম করে নূর মোহাম্মাদকে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায়োন্তর না পেয়ে তারাও তাই করলেন, কিন্তু একটি এসএলআর রেখে যান মারাত্মক আহত কমান্ডারের কাছে। নূর মোহাম্মাদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও এসএলআর নিয়ে শেষবারের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের উপর সেখানেই তিনি শহীদ হন।

পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোঁপের মধ্যে এই বীরের মরদেহ পাওয়া যায়। শত্রুর বেয়নেটে তার দেহ ছিল ক্ষত-বিক্ষত, চোখ দুটি কোটর থেকে উপড়ে ফেলেছিল নরপশুরা।

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ সঙ্গী সৈনিকদের প্রতি যে ভালবাসা প্রদর্শন করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দেশের জন্য আবারও হানাদারদের খতম করতে একা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করার চেষ্টা চালিয়ে দেশপ্রেমের যে প্রমাণ রেখেছেন তার কোনো তুলনা নেই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এদেশের মাটিতে নূর মোহাম্মাদের রক্তের গন্ধ পাওয়া যাবে। যতদিন এ জাতি থাকবে ততদিন নূর মোহাম্মাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহম্মদের শাহাদাত বার্ষিকী পালন উপলক্ষে সদরের চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলায় (নূর মোহম্মদ নগর ) মাজার জিয়ারত, কোরানখানি, র্যালি, শহীদের স্মৃতি বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, গার্ড অব অনার প্রদান, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল এবং তবারক বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহম্মদ শেখ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসন এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

হাফিজূল নিলু/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।