স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রভাষক স্বামী গ্রেফতার

হাত-পা বেঁধে চার দিন বন্দি করে স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রভাষক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টায় পিরোজপুর মাতৃসদন সড়কের একটি বাসা থেকে মোকাররম ওরফে বুলবুলকে (স্বামী) গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর পুলিশের জেরার মুখে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী পাগল। আমি তাকে কাঠের লাঠি দিয়ে মেরেছি। যখন মেরেছি তখন আমার জ্ঞান ছিল না। এক পর্যায় পুলিশের কাছ থেকে পার পাওয়ার জন্য তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম বলে দাবি করেন। এসময় জামায়াতের শুরা সদস্য মোকাররম ওরফে বুলবুলের এ কথায় থানায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
এদিকে সুমির স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিকেল ৪টায় খুলনায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এ বিষয় সুমির মামা পলাশ সিকদার জানিয়েছেন শরীরে আঘাতের জায়গায় পচন ধরার কারণে সেলাই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই ডাক্তাররা খুলনায় নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।
নির্যাতিত হওয়ার নেপথ্য কাহিনী : পিরোজপুর সদর হাসপাতালের ৩৪ নম্বর বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা স্বামীর ধারাবাহিক অত্যাচারের শিকার নাজরিন আক্তার সুমি (৩২) জানিয়েছেন, `মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিলাম ৪ জুন। কিন্তু অনুমতির বদলে মেলে নির্যাতন। মারধরের একপর্যায়ে দুই হাঁটুর মাঝে লোহার রড ঢুকিয়ে দেয়, যেন হাঁটতে না পারি। কাঠ দিয়ে মুখে আঘাত করলে ঠোঁটের নিচে গভীর ক্ষত হয়। ভারী জিনিসের আঘাতে দুই হাতের আঙুল থেঁতলে দেয়, হাতের কয়েক স্থানে কামড়ে দেয়। এরপর খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে ছোট একটি ঘরে চারদিন আটকে রাখে। দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ছেলে একই ছাদের নিচে থাকলেও প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিল না কারোরই। পরে মামা এসে উদ্ধার করেন।
স্বামীর অত্যাচার প্রসঙ্গে সুমি বলেন, `আমার স্বামী জামায়াতের শুরা সদস্য। সে ভীষণ রাগি। আমি পৈতৃক সূত্রে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। খুলনা ও পিরোজপুরে আমার নামে তিনটি বাড়ি আছে। এর আগে সে জোর করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার জমি নিয়ে বিক্রি করেছে। এখন সব সম্পদ নিজের কবজায় নিতে আমার ওপর এই অমানবিক অত্যাচার চালায়। গায়ে এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেয়। ছেলেমেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছে আসতে দেয় না। ও মানুষ না, একটা জানোয়ার।`
প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, মোকাররম দীর্ঘদিন ধরেই স্ত্রী নির্যাতন করছে। সুমিকে মারধরের বিষয়টি আশপাশের প্রায় সবারই জানা। আরেকটা বিয়ের অনুমতির জন্য তাকে পেটানো হয় বলে ধারণা অনেকের। আগে সুমিদের বাড়িতেই থাকতো মোকাররম। একপর্যায়ে সেখানেই এক নারীকে নিয়ে এসেছিল। তাকে বিয়ে করতে সুমির কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এলাকাবাসী এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে মোকাররম কথা দিয়েছিল দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে। সুমির গায়ে কখনো হাত তুলবে না বলেও মুরব্বিদের জানায় সে। কিন্তু পরে সুমিকে কৌশলে রাজারহাটের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চল জুজখোলার বরজালায় মোকাররমের নিজের বাড়িতে সুমিকে নিয়ে বাড়ায় নির্যাতনের মাত্রা। মোকাররমের দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে এক ছেলের জন্ম হয়েছে বলেও জানা যায়।
এ ব্যাপারে সুমির মামা পলাশ সিকদার বলেন, ভাগ্নিটা সুস্থ হলেই আমরা ওর সন্তানদের খোঁজ খবর ও দায় দায়িত্ব নিব। তবে সুমির মেয়ে মিম যেখানে আছে আমরা তার সন্ধান জানি। ওর পরীক্ষা চলছে। মিমের এক নিকটাআত্মীয়ের বাসায় নিরাপদে আছে। সুমির ছেলে অভির খবর পেয়েছি শুনেছি সে নির্বাক হয়ে রয়েছে। সেও বুলবুলের পরিচিত কোনো এক বাসায় আছে।
পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন বলেন, সুমির আইনি সহায়তার ব্যপারে পুলিশের কোনো কার্পন্য হবে না। মোকাররম ওরফে বুলবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাসান মামুন/এমএএস/আরআই