ঠাকুরপাড়ায় তাণ্ডব, কারাগারে প্রকৌশলী ফজলার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

রংপুরে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার ঘটনায় হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলার আসামি প্রকৌশলী ফজলার রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফেরদৌস আহমেদ ও গঙ্গাচড়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলী।

অপরদিকে আসামিপক্ষে জামিনের আবেদনও করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক আরিফুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে আগামী ২৭ ডিসেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

কোর্ট সিএসআই বাবর আলী আসামির জামিন নামঞ্জুর এবং রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ফজলারকে আদালতে আনার পর হাজতখানায় রাখা হয়।

ফজলার রংপুর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী। তার স্ত্রী সুলতানা আক্তার কল্পনা স্থানীয় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং তিনি সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।

ঠাকুরপাড়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় গত ১০ নভেম্বর রাতে গঙ্গাচড়া থানা পুলিশের এসআই রেজাউল ইসলাম ও কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। তদন্তে সহিংসতার ঘটনায় উস্কানিদাতা হিসেবে নাম আসার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান প্রকৌশলী ফজলার রহমান।

রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে ফজলারকে গ্রেফতার করার বিষয়টি জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফেরদৌস আহমেদ জানান, রংপুর পুলিশের একটি দল ঢাকায় গিয়ে সেখানকার গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় শ্যামলী এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগ এনে গত ৬ নভেম্বর ঠাকুরপাড়ার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায়ের (৪০) বিরুদ্ধে রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ গ্রামের মুদি দোকানি রাজু মিয়া গঙ্গাচড়া থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

এরপর টিটু রায়কে গ্রেফতারের দাবিতে ৭ নভেম্বর পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। বিক্ষোভের পর তাকে (টিটু) গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপিও দেন তারা।

এরপরেও টিটু গ্রেফতার না হওয়ায় ওই এলাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মর্সূচি দেন স্থানীয়রা।

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১০ নভেম্বর জুমা নামাজের পর স্থানীয় মুসুল্লিরা শলেয়াশাহ বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। একপর্যায়ে আশেপাশের এলাকা থেকে কয়েক হাজার মুসুল্লি ও গ্রামবাসী একজোট হয়ে ঠাকুরপাড়ার দিকে অগ্রসর হতে ধরলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে হাবিব (২৭) নামে এক স্থানীয় যুবক নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

এসময় বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও গ্রামবাসী ঠাকুরপাড়ার ৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

এঘটনায় ২৫-৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২ থেকে আড়াই হাজার জনকে আসামি করে গঙ্গাচড়া ও কোতোয়ালি থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।

এদিকে, মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে টিটু রায়কে গ্রেফতারের পর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। টিটু রায় বর্তমানে কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

জিতু কবীর/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।