‘শীতকে ভয় পাওয়া সাহেবদের কাজ’
দেশের পর্যটন জেলা ও চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় এবং হাওর পাড়ের লোকসহ দিনমজুর ও ছিন্নমূল লোকেরা পড়েছে ভীষণ বেকায়দায়।
গত ৪ জানুয়ারি থেকে মৌলভীবাজারে হঠাৎ বেড়ে চলেছে শীতের তীব্রতা। জেলার তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি থেকে নেমে এ বছরে মৌলভীবাজারের সর্বনিম্ন ৫ ডিগ্রিতে এসেছে। তাপমাত্রা হঠাৎ নেমে আসায় প্রচণ্ড শীতে জেলার জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। হার কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় বিপাকে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চা শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডা জনিত রোগ। তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে হিমশিম খাচ্ছেন চা শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের শ্রমজীবী ও হাওড় পাড়ের মানুষ।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে হাকালুকিসহ হাওড় পারের মানুষ। গত বছর মার্চ থেকে শুরু হওয়া বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় হাকালুকি হাওড় পাড়ের বাসিন্দারা সব হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। হঠাৎ নেমে আসা তীব্র শীত মোকাবেলায় তাদের নেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। বন্যায় সব হারানোর পরপর এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা তারা।
একই অবস্থা মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে। মৌলভীবজারে ২টি ফাঁড়ি বাগানসহ ৯২টি চা বাগানে কয়েক লক্ষ চা শ্রমিক কাজ করছে। টানা শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশায় মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা মানবেতর দিনাতিপাত করছেন।
জেলার ‘চম্পা তাতি’ চা বাগানের শ্রমিক কিরণ চাষি বলেন, শীত বা গরম এসব আমাদের মানলে চলে না আমাদের কাজ করতে হয়। শীতকে ভয় পাওয়া সাহেবদের কাজ। দৈনিক ৮৫ টাকা রোজগার করে শীতের কাপড় ক্রয় করা সম্ভব না। ঠান্ডায় মরে গেলেও কাজ করতে হবে। অন্যথায় না খেয়ে থাকতে হবে।
চা শ্রমিক মুক্তা কৈরী বলেন, বাইরে ঠান্ডায় কাজ করে ঘরে এসে পাটের বস্তা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। কারণ, পরিবারের সদস্য ৬ জন, কিন্তু ঘরে কম্বল আছে মাত্র ২টি।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আশরাফ আলী জাগো নিউজকে জানান, মৌলভীবাজারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২৫ হাজার ২শ’ পিস এবং দুর্যোগ ও মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় ৪ হাজার এবং ৮ হাজার মোট ১২ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে।
চা শ্রমিকদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আশরাফ আলী জানান, এ ব্যাপারে আগে কেউ দৃষ্টি আর্কষণ করেনি এখন থেকে চা শ্রমিকদের ব্যাপারে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হবে।
এমএএস/আরআইপি