ভোলা থেকে ঢাকার লঞ্চ ভাড়া ২০ টাকা
ভোলার চরফ্যাশন বেতুয়া লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা সদর ঘাট পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার নৌপথের ভাড়া মাত্র ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। লঞ্চযাত্রীরা বলছেন, ভোলার চরফ্যাশনের লঞ্চঘাটে শায়েস্তা খানের আমলের ছোঁয়া লেগেছে।
ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর ঘোষের হাট, লালমোহনের নাজিরপুরসহ পশ্চিমাঞ্চলের লঞ্চঘাটগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। এর মধ্যে লঞ্চের এমন কম ভাড়া যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোলার বেতুয়া লঞ্চঘাটে ৩টি লঞ্চের স্টাফদের ডাক-চিৎকার। ঢাকার ভাড়া ২০ টাকা, ২০ টাকা। ২০ টাকা করে টিকিট কেটে যাত্রীদের লঞ্চে উঠানো হচ্ছে।

লঞ্চের এমন কম ভাড়ার কারণে বর্তমানে চরফ্যাশনের যাত্রীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার বা ঘুরার জন্য রাজধানীতে যাতায়াত করতে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। যাত্রীদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এমনকি বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বিশেষ সুবিধাও দিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চরফ্যাশন থেকে ঢাকা যাতায়াতের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদ জিয়া চরফ্যাশন টিবি স্কুল মাঠে সমাবেশে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ভোলায় লঞ্চ দেয়ার ঘোষণা দিলেও কোকো লঞ্চের ব্যবসার ক্ষতি হবে মর্মে লঞ্চ দিতে ব্যর্থ হয় বিএনপি।
পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এখানে লঞ্চের ব্যবস্থা করেন। পর পর একই ঘাট থেকে ৩টি লঞ্চের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
স্থানীয় আসলামপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরে আলম মাস্টার বলেন, আমাদের উপমন্ত্রী শুধু ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেননি বরং জনকল্যাণে যাত্রীদের সেবা দিতে রাজধানীতে পৌঁছতে লঞ্চ দিয়ে এই সুযোগ করে দিয়েছেন। একাধিক লঞ্চের প্রতিযোগিতায় যাত্রীরা এখন ২০ টাকা ভাড়ার সুবিধা পাচ্ছেন।
এমভি ফারহান-৫ লঞ্চের ম্যানেজার জাহিদ বলেন, একই ঘাট (বেতুয়া) থেকে ৩টি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকায়। আমরা ডেকের ভাড়া পূর্বে নিতাম ৩০০ টাকা। ডাবল কেবিন ২০০০ হাজার, সিঙ্গেল ১০০০ হাজার টাকা। এই ঘাটে এমভি তাসরিফ ৩-৪ এসে ভাড়া বেতুয়া থেকে নিচ্ছে ১০০ টাকা, ঢাকা ঘাট থেকে নিচ্ছে ১৫০ টাকা। তাই আমরাও নিতে বাধ্য হচ্ছি। এর মধ্যে নতুন করে এমভি কর্ণফুলি ১২-১৩ এসে ভাড়া নিচ্ছে ২০ টাকা। তাই আমরাও ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছি। তারা যদি যাত্রী ফ্রি নেয়, আমরা ফ্রি নেব।

লঞ্চযাত্রী আব্বাস উদ্দিন বলেন, ভাই ঢাকা যাচ্ছি দুটি শার্ট কিনব। ওইদিনেই আবার লঞ্চে চড়বো। আসা-যাওয়া মাত্র ৪০ টাকা লাগবে। আমাদের আসলামপুর থেকে চরফ্যাশন রিকশা ভাড়া লাগে ৫০ টাকা। আর ঢাকা যেতে লাগে ২০ টাকা করে ৪০ টাকা। তাই ঢাকাই যাচ্ছি। এই সুযোগ যদি আমরা কাজে লাগতে না পারি তাহলে আমাদের কপালটাই খারাপ।
এমভি ফারহান-৫ লঞ্চের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, বেতুয়া থেকে ঢাকায় ২৭৪ কিলোমিটার। সরকারি হিসাবে ভাড়া আসে ৩৭৪ টাকা। লঞ্চ প্রতিযোগিতার জন্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ ও ডাবল কেবিন ১৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলার আহম্মদপুরের ফরিদাবাদ গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, ঘোষের হাট দিয়ে ভাড়া বেশি হওয়ায় আমরা ২০ টাকায় টিকিট কেটে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চে ঢাকায় যাচ্ছি।
লঞ্চযাত্রী ফখরুল ইসলাম বলেন, ফারহান-৫ ও ৬ লঞ্চ ঢাকায় ও বেতুয়া ঘাটে সব লঞ্চের আগে পৌঁছে। এই জন্যই আমরা কাজ করতে সুবিধা পাই। এছাড়া ২০ টাকায় লঞ্চের টিকিট হওয়ায় যাতায়াতে অনেক সুবিধা। সেইসঙ্গে লঞ্চযাত্রীও দিন দিন বাড়ছে।
এএম/আরআইপি