এ যেন আরেক এরশাদ শিকদার
মানুষ খুন করে কুলি থেকে কোটিপতি হয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ‘স্বর্ণ কমল’ নামে আলীশান বাড়ি বানিয়ে আলোচিত খুনি এরশাদ শিকদার। অবশেষে তাকে মানুষ হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
সেই এরশাদ শিকদারের মতোই যেন আরেক খুনি সাতক্ষীরার আব্দুল জলিল। একের পর এক রাজনৈতিক দলবদল। দিন মজুরের কাজ থেকে শুরু করে মানুষ হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি-সবই তিনি করেছেন। একসময়ে জাতীয় পার্টি পরে বিএনপি তারপর বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগে যোগ দেন জলিল। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতিও হন তিনি। তার আগে ছিলেন তরুণ লীগের নেতা। ২০১৩ সালে সহিংসতার সময় বিএনপি-জামায়াতের মিছিলে নেতৃত্ব দেন এই জলিল।

কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে জলিল। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর খুন করেন কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনকে। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটে তার অপরাধ জীবনের। শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে এলাকাবাসী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর নিজেদের কাজে ব্যবহার ও আধিপত্য বিস্তার করতে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওহেদুজ্জামান এই জলিলকে আওয়ামী লীগে যোগদান করান। প্রথমে তরুণ লীগ পরে শ্রমিক লীগের সভাপতি হন ডাকাত জলিল।আওয়ামী লীগের যোগদানের পর সখ্যতা গড়ে ওঠে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের সঙ্গে। বিভিন্ন সময় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাগিয়ে নিতেন এই জলিল। জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী।
তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি অস্বীকার করে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওহেদুজ্জামান বলেছেন, তাকে দলে যোগদান করানো হয়নি বা তিনি কখনও তাকে কোনো রুপ সহযোগিতা করেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে এই খুনি জলিলের লাগানো ফেস্টুনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহেদুজ্জামানের ছবি রয়েছে। এলাকায় প্রচার রয়েছে এই খুনি জলিল তার পোষ্যপুত্র হিসেবে খ্যাত। তার প্রভাব খাঁটিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতেন জলিল। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওহেদুজ্জামান।
সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শ্যামনগর আসনের সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারও। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি তাকে দলে আনিনি। আর আমি কালিগঞ্জের সাংগঠনিক বিষয়গুলো দেখার কেউ নই। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
প্রকল্প দেয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, আমি তাকে একটি প্রকল্প দিয়েছিলাম। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি প্রকল্প নিয়েছিল। তবে আমি তাকে কখনও দেখিনি বা আমার সাথে কোনো পরিচয়ও নেই।

২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপির সহিংসতার মিছিলে কালো চশমা পরা (ডানদিক থেকে তৃতীয় ব্যক্তি) জলিল
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মী মাজেদ পাড় খুন হন। মরদহেটি সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়া হয়। এই হত্যাকাণ্ডেও জলিল জলিল সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় মুক্ত হয়ে যান জলিল।
২০১৩-১৪ সালে কালিগঞ্জে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ওলিউর রহমানের পরিবারের দাবি, জলিল টাকা দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, শনিবার রাতে জলিলকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে গ্রামবাসী। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত চারটি হত্যাসহ ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ১২টি মামলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে অপরাধের যেন শেষ
নেই। এ যেন আরেক এরশাদ শিকদার!
আকরামুল ইসলাম/এসআর