কেঁচো সারে বদলে গেছে পাইসুচিংয়ের ভাগ্য

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

ধলিয়া খালের পাশে ছায়া ঘেরা ছোট্ট একটি বাড়ি। বাড়ির ভেতরে ছোট দুটি ঘরে সারি সারি সাজানা রিংয়ে চলছে কেঁচো সার বা বার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রক্রিয়া। মাত্র দুটি রিং দিয়ে শুরু করে গত দুই বছরে ৩৮ রিংয়ে বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদান করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক পাইসুচিং মারমা। প্রায় প্রতিদিন তার উৎপাদিত বার্মি কম্পোস্ট সার কিনে নিয়ে যায় স্থানীয় কৃষকরা।

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার ধলিয়া খাল পাড়ের বাসিন্দা কৃষক পাইসুচিং মারমার। বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপণনে তার সংসারে সমৃদ্ধি এসেছে। শুধু বিক্রি নয়, তিনি নিজের জমিতেও বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ব্যবহার করছেন। এই সার ব্যবহারে তার জমিতে বিষমুক্ত সবজি ফলছে। এছাড়া বার্মি কম্পোস্ট সারের পাশাপাশি সার উৎপাদনকারী বিশেষ কেঁচোও বিক্রি করছেন।

Barmi-Compost

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া জানান, কেঁচো সার উৎপাদনে পাইসুচিং মারমার সাফল্যে অনেকেই বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।

সম্প্রতি বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনের গল্প শোনালেন কৃষক পাইসুচিং মারমা। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়ার উৎসাহ আর পরামর্শে নিজের ব্যবহারের জন্যে দু’টি রিংয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। বাড়ির পাশে মাল্টা চাষে বার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেছি। কৃষি বিভাগের দেয়া ৪০০ গ্রাম এপিজিক কেঁচো দিয়ে শুরু করলেও আস্তে আস্তে কেঁচোর পরিমাণও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে রিংয়ের পরিধি। প্রতিটি রিংয়ে প্রায় ২০০ কেজি জৈব সার উৎপাদন হয়। প্রতি রিং উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৫০০ টাকা। ১৫ টাকা কেজি দরে সার বিক্রি করে এক রিং থেকে প্রায় ৩০০০ টাকা পাওয়া যায়। তাই খরচের তুলনায় দাম ভালো পাওয়ায় বর্তমানে ৩৮টি রিংয়ের সফল বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারী কৃষক পাইসুচিং মারমা।

Barmi-Compost

বিক্রির পাশাপাশি নিজের ফসলি জমিতে এ সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এ কৃষক জানান, এতে ফসলের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি উৎপাদন খরচও কমেছে। এই সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা বেড়েছে, মাটিও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার একটি ফসল বা গাছের সুষম খাদ্যের যোগান দেয়। যেখানে রাসায়নিক সারে কেবল এক বা দুইটি খাদ্য উপাদান থাকে সেখানে বার্মি কম্পোস্টে রয়েছে সুষম খাদ্য উপাদান। কেঁচো সার উৎপাদনে এপিজিক ও এন্ডোজিক নামে দুই ধরনের কেঁচো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে মাটিতে অনুজীবের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটিতে বাতাসের চলাচলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত রিং পদ্ধতিতে বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদিত হয়। কলার বাকলসহ বিভিন্ন ঘাস, লতার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ রেখে দিতে হয়। পরে রিংয়ের মধ্যে ২০০ গ্রাম এপিজিক ও এন্ডোজিক কেঁচো মিশিয়ে রাখতে হয়। এভাবেই তৈরি হয় বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। দুই মাসে প্রতিটি রিং থেকে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি বার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদিত হয়। প্রতি রিং বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৫০০ টাকা।

Barmi-Compost

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া জানান, খাদ্যে ভেজাল বা রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে কৃষকরা বার্মি কম্পোস্ট সার বেছে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কৃষক পাইমুচিং মারমার সঠিক পরিচর্যা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এই প্রকল্পে সাফল্য পেয়েছে। বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে কেউ আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/আরএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।