কাঁটাতারে থমকে গেছে বারুনী স্নানোৎসব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১০:৩৬ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৯

দক্ষিণ পাড়ে বাংলা আর উত্তর পাড়ে ত্রিপুরা। মাঝখানে বয়ে গেছে বিভাজন রেখা তৈরি করা ফেনী নদী। আর এই ফেনী নদীতেই দুই বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যোগ দেন বারুনী স্নানোৎসবে। প্রতিবছর বারুনী স্নানোৎসব ঘিরে লক্ষাধিক পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটলেও এ বছর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবির কড়াকাড়িতে বারুনী স্নানোৎসবে ভাটা পড়েছে। কাঁটাতারে থমকে গেছে ফেনী নদীর ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব।

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ভারতের স্থানীয় নির্বাচন ঘিরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ফেনী নদীতে কাঁটাতারের অস্থায়ী বেড়া দিয়েছে। ফেনী নদীতে পূজা আর্চনায় দুই দেশের পূণ্যার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দিনভর বারুনী স্নান ও পূজা আর্চনার সুযোগ থাকলেও সীমান্ত পারাপার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।

Baruni-MELA

এদিকে বিএসএফের কড়াকড়িতে বিজিবিও বাংলাদেশিদের সীমান্ত পারাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সময় সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়।

ব্রিটিশ আমল থেকেই চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রতি বছরই ফেনী নদীতে বারুণী স্নানে মিলিত হন দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। তারা পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পন করেন এখানে। সকাল থেকেই নদীর দুই তীরে পূজা আর্চনায় বসেন দুই দেশের পুরোহিতরা। পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজের পূণ্যলাভ, পাপ ও পংকিলতা থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে ফেনী নদীর বারুণী স্নানে ছুটে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

Baruni-MELA

শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয়, এদিন সাবেক মহকুমা শহর রামগড় পরিণত হয় মুসলিম, ত্রিপুরা, মারমা, চাকমাসহ সকল সম্প্রদায়ের লাখো মানুষের মিলনমেলায়। বারুনী স্নান উৎসবটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। দু’দেশে অবস্থানকারী আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে ছুটে আসেন।

ঐতিহ্যবাহী এ বারুনী মেলা উপলক্ষে দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই দিনে দুই দেশের সীমান্ত অঘোষিতভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর শিথিলতায় সারাদিন এপার-ওপারে ঘোরাঘুরি করেন দুই বাংলার মানুষ। প্রতিবছরই কাঁটাতার ভেদ করে উৎসবে মেতে ওঠে দু’পাড়ের বাংলা ভাষাভাষি মানুষ।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।