বিদেশ থেকে ফিরে হাসপাতালে গিয়ে নিজেই নাম লেখাচ্ছেন প্রবাসীরা
ছয় দিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে আসা এক যুবক এসেছেন হাসপাতালের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য। তার সঙ্গে হাসপাতালে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য এসেছেন এলাকার বিদেশ ফেরত আরও কয়েকজন যুবক। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে জরুরি বিভাগে তাদের বসে থাকতে দেখা গেছে।
ফলে করনোভাইরাসের বাড়তি সতর্কতায় মানিকগঞ্জে বিদেশ ফেরত শতাধিক ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলা হলেও এই কার্যক্রম কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হোম কোয়ারেন্টাইন তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা এলাকায় ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন, স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সংক্রমিত দেশ থেকে আসা ব্যক্তিরা অবাধে চলাফেরা করায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। বিদেশ ফেরতদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং প্রশাসনকে আরো নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা বলছেন, স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে খবর পাঠিয়ে তাদের নাম তালিকাভুক্তির জন্য ডেকে নেয়া হচ্ছে। তারা নিজেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, হাসপাতাল এবং থানায় গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। বাড়িতে এসে স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা অন্য কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না।
ইতালি ফেরত দুই ভাই জানান, তারা সুস্থ আছেন। করোনা নিয়ে নিজেরাও ভয়ের মধ্যে আছেন। এজন্য খবর পেয়েই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, হাসপাতাল এবং থানায় গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তারা বলেন, বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের যদি ডেকে নিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে আরও ঝুঁকি বাড়ে। কারণ ওই ব্যক্তিকে বাস, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে পৌঁছাতে হয়। যদি কারো সংক্রমণ থাকে তাহলে তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ডেকে নিয়ে নয়, বাড়ি এসে তালিকাভুক্ত এবং সতর্কতার জন্য কী করা যেতে পারে তার পরামর্শ দেয়ার দাবি জানান তারা।
একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আসা বিদেশ ফেরত কয়েকজন ব্যক্তি জানান, বিদেশ থেকে আসার পর তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। কারণ তারা সুস্থ আছেন। তাদের চলাফেরায় কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বাড়িতে গিয়েও কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। নিজের ও পরিবারের ঝুঁকি এড়াতে নিজ উদ্যোগেই হাসপাতালে এসেছেন। নাম তালিকাভুক্তির পর হাসপাতাল থেকে তাদের বাইরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কোনো শারীরিক সমস্যা হলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, বিদেশ ফেরত যেসকল ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তারা সবাই সুস্থ আছেন। তাদেরকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তারপরও যদি কেউ এই নিষেধাজ্ঞা না মেনে এলাকায় অবাধ বিচরণ করে তাহলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিদেশ ফেরতদের ডেকে এনে নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কথাটি সঠিক নয়। বাড়িতে কিংবা এলাকায় গিয়েই তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের খোঁজ খবরও রাখছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলায় ১০৯ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমকেএইচ