সেন্টমার্টিনে জাহাজসহ কক্সবাজারের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ
করোনার ঝুঁকি এড়াতে অবশেষে কক্সবাজারের সব পর্যটনকেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
বুধবার বিকেল থেকে পর্যটনস্পটগুলোতে লোকসমাগম নিরুৎসাহিত করায় কক্সবাজার সৈকত জনশূন্য হয়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। শুক্রবার থেকে সেন্টমার্টিনগামী সব পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত আসেনি পর্যটনকেন্দ্রিক আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফেসহ খাবার প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে। এরপরও তারকা হোটেল ও আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০-৬০ শতাংশ কর্মজীবীকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
দূরপাল্লার বাস চললেও করোনার প্রভাবে প্রায় বাসই যাত্রীশূন্য। খালি যাচ্ছে বিমানের সিটও। প্রশাসনিক ঘোষণার পর থেকে পর্যটকদের আগমন ঠেকাতে জেলার প্রবেশদ্বার চকরিয়ায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তল্লাশি চলছে যাত্রীবাহী বাসে। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও জনসমাগমের জায়গায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলিসহ সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করা পর্যটকদের নিরাপদে গন্তব্যে ফিরতে সহযোহিতা করছে প্রশাসন।
পর্যটন এলাকায় জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারির পর কক্সবাজারের তারকা হোটেলসহ অন্য আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে বুকিং নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওশান প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার ইমতিয়াজ সোমেল।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় হোটেল-মোটেল তাদের ৫০-৬০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে। যারা ছুটিতে আগে গেছেন তাদের আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থান করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে যে সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দরকার কেবল তাদের হোটেলে অবস্থান নিশ্চিত করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারিদিকে শুনশান নীরবতা। আবাসিক হোটেলগুলোতে চোখে পড়ার মতো কোনো পর্যটক নেই। আগের মতো জটলা নেই বাস স্টেশনগুলোতেও। প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলছেন আবাসিক হোটেলের মালিকরা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে শুক্রবার থেকে পর্যটকবাহী জাহাজগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সকল পর্যটককে বৃহস্পতিবারের মধ্যে দ্বীপ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। নতুন কোনো পর্যটক পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সেখানে না যেতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ইউএনও।
অপরদিকে, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নতুন কোনো বিদেশির প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। প্রবেশ করতে হলে তাকে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে ক্যাম্পে আগে থেকেই কর্মরত বিদেশিরা এ নির্দেশনার আওতায় পড়বেন না। আগে থেকে ক্যাম্পে কাজ করায় তাদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার।
সায়ীদ আলমগীর/এমএআর/পিআর