হামা কি না খেয়া মরে যাম বাহে?
‘পাঁচদিন ধরে কোনো কাম কাজ নাই, খালি ভ্যানখান নিয়া বসে আছি। হামার রোগের ভয় নাই, পেটের টানে বাইরে ভ্যান নিয়া আসছি। সরকার থাকি কোনো খাবার পাইনো না। হামা কি না খেয়া মরে যাম বাহে?’ কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক জহির আলী (৫৫)।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের ঘনেশ্যাম গ্রামের ভ্যানচালক জহির আলী। প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যা অর্থ আসে তা দিয়ে চাল, ডাল কিনে বাড়ি ফেরেন। গত পাঁচদিন থেকে কোনো ভাড়া না পেয়ে উপজেলার তুষভাণ্ডারের চিড়ার মিলে বসে আছেন।
জহির আলীর দুই ছেলে দুই মেয়েসহ ৬ জনের সংসার। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান তিনি। করোনা ভাইরাসের সংক্রোমণ রোধে সবকিছু বন্ধ হওয়ায় পরিবারটি এখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
রোববার (২৯ মার্চ) সকালে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার এলাকায় কথা হয় ভ্যান চালক মাছুম আলী (৫০) ও আতিকুল ইসলামের (৪৫) সঙ্গে। তারা জানান, কয়েক দিন ধরে পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছেন। কোনো উপার্জন নাই। মানুষ ঘর থেকে বেরায় না। ঘরে খাবার নেই। আজ যে কী খাবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।
লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় সব দোকানপাট বন্ধ। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। পরিবারের খাবার জোগাতে এসব মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকারিভাবে কিছু পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী দিলেও তা খুবই কম।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রায় ১০ হাজার পাথরভাঙা শ্রমিক কাজ হারিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থলবন্দরের কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের পাথরভাঙা শ্রমিক শফিকুল বলেন, ‘প্যাট কি আর অসুখ মানে! হামার হাত দুকোনার উপরোত চলে সংসার। কাজ বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে আছি।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান জানান, উপজেলায় হতদরিদ্র প্রায় ৩শ পরিবারকে চাল, ডাল ও তেল বিতরণ করা হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পাঁচ উপজেলার ৩ হাজার দরিদ্রের জন্য ১৯২ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ এসে তা বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে একশ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ টাকা এসেছে তা দ্রুত বিতরণ করা হবে।
রবিউল হাসান/এফএ/এমএস