পশ্চিমবঙ্গে আটকে পড়া ৮১ বাংলাদেশি ফিরলেন বিশেষ ব্যবস্থায়
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকারের ঘোষিত ‘লকডাউনে’ কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া ৮১ বাংলাদেশি শুক্রবার বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা ভারতের পেট্রাপোলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বাংলাদেশে আসেন।
ভারতে ২১ দিনের ‘লকডাউন’ ঘোষণা করায় প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি ভারতে আটকে পড়ে আছেন। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের তথ্য অনুসারে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় এক হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন।
‘পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ভারত এবং অন্যান্য দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে আটকে পড়া ৮১ বাংলাদেশিকে দু’দেশের দূতাবাস ও সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পর তাদের ‘ঘরবন্দি’ দশা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয় ভারত কর্তৃপক্ষ। মোদি সরকার ভারতে ‘জনতার কারফিউ’ ডাক দিলে গত ১৩ মার্চ থেকে ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশিদের। এরপর ২৬ মার্চ থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে উভয় দেশ থেকে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রী পারাপার। এতে ওপারে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
এদিকে কোভিড-১৯’র কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ নিশ্চিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে বাংলাদেশি মিশনগুলো ফোনে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশি কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখছে। এত আরও বলা হয়েছে, আর্থিক সংকটসহ আটকে পড়া আড়াই হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের যে কোনো সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মিশনগুলো সক্রিয় রয়েছে।
চিকিৎসা, পর্যটন এবং শিক্ষার উদ্দেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফর করে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে, যে কারণে আন্তঃপ্রদেশীয় পরিবহন নেটওয়ার্কও বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, কলকাতা থেকে ফেরা ৮১ বাংলাদেশির ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বিশেষ ব্যবস্থায় এদিন দেশে ফেরা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে অধিক কড়াকড়ি ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তবে তাদের কারও দেহে উচ্চতাপমাত্রা বা করোনাভাইরাসের অন্য কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। এদিন ভারত থেকে আসা যাত্রীদের প্রত্যেককে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষাকালে তাদের হাতে বিশেষ চিহ্নিতকরণ লাল সিল দেয়া হয়।
বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, ভারত থেকে আসা বাংলাদেশিদের বাড়ি যশোর, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে প্রত্যেকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর রাখা হয়েছে। স্ব স্ব জেলায় সেগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হবে তাদের প্রতি নজর রাখতে।
মো. জামাল হোসেন/জেডএ