করোনাকালে তাক লাগালো নয়নের ইজিবাইক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২০

‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাড়িতে বসেছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরই সংসারে অর্থের টান পড়ে। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন মাথায় আসে সামাজিক দূরত্ব মেনে ইজিবাইকে যাত্রী বহনের বিকল্প চিন্তা। শুরু করি আমার ইজিবাইক তৈরির কাজ। ইজিবাইকে ৮ জন যাত্রী বসার সুযোগ থাকলেও এই ইজিবাইকে চারজন বসা যায়। আমার ইজিবাইক রাস্তায় নামার কয়েক দিনের মধ্যে স্থানীয় যাত্রী ও জেলা প্রশাসনের নজর কাড়ে। ইতোমধ্যে প্রশংসা করে ফেসবুকে ভিডিও দিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ।’

কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক নয়ন হোসেন।

করোনা মোকাবেলায় দেশে যখন গণপরিবহন বন্ধ, তখন সংসার চালানোর তাগিদে ইজিবাইক বা অটোরিকশা নিয়ে সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকে রাস্তায় নামলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহনের জন্য নয়নের অভিনব কৌশল তাক লাগিয়েছে সবাইকে।

EASYU

ইজিবাইকে সাধারণত আটজন যাত্রী বহন করা হয়। কিন্তু তিনি বাইকটি চারটি আলাদা ভাবে ভাগ করে চারজন করে যাত্রী বহন করছেন। চার ভাগের মধ্যে পার্টিশন থাকায় কোনো যাত্রীর সঙ্গে অন্য যাত্রীর শারীরিক স্পর্শ লাগছে না। হাঁচি-কাশি থেকেও নিরাপদে থাকছেন যাত্রীরা। এছাড়া ইজিবাইকের হ্যান্ডেল ধরে যাত্রীরা যেন নিরাপদে বসতে পারেন এজন্য গাড়িতে টিস্যু পেপারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ফেসবুকে নয়নের এই অভিনব আবিষ্কারেরর একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনায় আসেন নয়ন। অনেকেই এ কাজের জন্য প্রশংসা করছেন তার।

ইজিবাইকচালক নয়ন হোসেন জানান, করোনার কারণে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ইজিবাইক নিয়ে বাইরে বের হলে পুলিশ সমস্যা করে। এজন্য প্রথমে বাড়িতেই বসেছিলেন। ইজিবাইকের ভেতর অনেক মানুষ একসঙ্গে বসেন বলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কথা মাথায় আসে তার। কিন্তু কয়েক দিন যেতেই টান পড়ে সংসারে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তার মাথায় আসে ইজিবাইকে আলাদা আলাদা আসন তৈরির চিন্তা।

নয়ন বলেন, চিন্তা আসার পরই কাজে লেগে পড়ি। এক সপ্তাহের মধ্যেই তৈরি করে ফেলি আলাদা চার আসনের গাড়ি। এই পদ্ধতির কারণে বেড়েছে আয়-রোজগারও। আর পুলিশও এখন ঝামেলা করে না।

নয়নের ইজিবাইকে ওঠা যাত্রীরা জানান, যে পদ্ধতিতে ইজিবাইক তৈরি করা হয়েছে সত্যিই করোনা আতঙ্কের সময়ের জন্য উপকারী। একজন যাত্রী অন্যজনের সংস্পর্শে আসছে না। কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছে না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, নয়ন যে পদ্ধতিতে ইজিবাইক তৈরি করেছে তা আমাদের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তাকে নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলাম। পরে তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।