করোনা সংকটে মানসিক ভারসাম্যহীনদের পাশে মুক্তিযোদ্ধা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবলে জর্জরিত সারাবিশ্ব। মানুষ বাঁচা-মরার চিন্তায় বিভোর। খেয়ে না খেয়ে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মানুষ। এক মুঠো খাবারের সন্ধানে দিগ্বিদিক ছুটছে অসহায় মানুষগুলো। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী বাজারের মানসিক ভারসাম্যহীনদের (পাগল) পাশে দাঁড়িয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন নৈশপ্রহরী আজাহার আলী।
তারা দুজনে মানসিক ভারসাম্যহীন-ভবঘুরে মানুষগুলোর মুখে খাবার তুলে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। করোনার প্রভাবে বাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বেশির ভাগ খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় মানসিক ভারসাম্যহীনরা খাবার খেতে পারছেন না। এই অসহায় মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে তাদের জন্য এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম পেশায় একজন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মাল ভাঙা গ্রামে। চাকরির সুবাদে ১৯৯৪ সাল থেকে রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারীতে অবস্থান করছেন।
কর্তিমারী বাজারের ব্যবসায়ী মাহফুজুল হক ও সৈয়দ আলী বলেন, বাজারে সব সময় ৮-১০জন করে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ দেখা যায়। বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি এসব পাগলদের রাতে রান্না করা খিচুরি দেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও নৈশ প্রহরী আজাহার আলী। আমরা শুনেছিলাম মুক্তিযোদ্ধার ছোট ভাই তার বাড়ি থেকে প্রায় ১৮-২০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে তিনি এমন পাগলদের প্রতি বিভিন্নভাবে সহানুভূতি দেখিয়ে আসছেন। এবার করোনায় সুস্থ সবল মানুষরাই বিপদে রয়েছে। পাগলের প্রতি এমন ব্যতিক্রমী ভালোবাসা সত্যি আমাদের মন নাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেশী ইসরাফিল হক ও আনিসুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী-সন্তানরা ১৯৯৪ সাল থেকে এখানে রয়েছে। তাদের আচার-আচরণ দেখে তাদের কাছে কোনো ভাড়া নেই না। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাদের সবারই বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে তারা স্বামী-স্ত্রী এ বাড়িতে থাকেন। তাদের মহানুভবতা দেখে আমরা সত্যিই অভিভূত।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ভবঘুরে মানুষগুলো যে কতটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তা চোখে না দেখলে বুঝার উপায় নেই। তাই সাধ্যমত চেষ্টা করছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। যতদিন পর্যন্ত করোনার এ প্রভাব স্বাভাবিক না হয় ততদিন পর্যন্ত তাদের এ খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আমার সাধ্যের মধ্যে ডাল, আলু দিয়ে খিচুড়ি করে বাজারের ৮-১০জন পাগলের খাবার দেই। গত ১৪ এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে খাবার দিয়ে যাচ্ছি। এ কাজে আমার স্ত্রী আমাকে খুব সহযোগিতা করে। কখনও বিরক্ত হয় না।
কর্তিমারী বাজারের নৈশপ্রহরী আজাহার আলী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর সহায়তায় প্রতিদিন রান্না করা খাবার বাজারে থাকা পাগলদের মাঝে বিতরণ করি। করোনাকালে এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে পেরে মনের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ পাই।
নাজমুল হোসাইন/আরএআর/জেআইএম