টিউশনির টাকায় কেনা মোটরসাইকেল বিক্রি করে অসহায় মানুষের পাশে শুভ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০২০

টিউশনির টাকায় কেনা শখের মোটরসাইকেল বিক্রি করে করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন শুভ। বন্ধুদের নিয়ে ফেনী শহরের বনানী পাড়া ও বারাহীপুর এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষের কাছে তুলে দিয়েছেন ‘ভালোবাসার উপহার’।

ফেনী ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন শুভ।

করোনা পরিস্থিতিতে ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন শুভ। তবে চাহিদার তুলনায় ত্রাণের অপর্যাপ্ততা ভাবিয়ে তোলে তাকে। এ পরিস্থিতিতে নিজে কিছু করার উদ্যোগ নেন।

গত ২২ এপ্রিল শুভর বন্ধু মোশাররফ হোসেন মোটরসাইকেল কিনতে চান। আর একেই সুযোগ হিসেবে নেন ফেনী ইউনিভার্সিটির এই ছাত্র। বন্ধুর কাছে শখের মোটরসাইকেলটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে দেন শুভ। সেই টাকা থেকে প্রথম ধাপে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ২৪ এপ্রিল নিজ এলাকা বনানী পাড়ায় ২৫ পরিবারের হাতে তুলে দেন খাদ্যসামগ্রী। পরে ২৮ এপ্রিল ওই টাকা থেকে আরও খাদ্যসামগ্রী কিনে শহরের বরাহীপুর এলাকায় ৩৫ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।

কিছু টাকা বন্ধুদের নিয়ে গড়া ২০১১-১৩ ব্যাচের দাতব্য তহবিলে জমা দিয়েছেন শুভ। বাকি টাকা দিয়ে ঈদে অসহায়দের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা তার।

শুভর সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নেন তার বন্ধু বাপ্পী, তানভির, আমজাদ, শুভ, জাকির, সৈকত ও মিল্লাত। এ কার্যক্রমেও বন্ধুরা তার পাশে থেকে সহযোগিতা করছেন।

Shuvo

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজ পানুয়া এলাকায় শুভদের পৌত্রিক বাড়ি হলেও ছোটবেলা থেকে শহরের বনানী পাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছে তারা। সৌদিফেরত মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও পারভিন আক্তারের ছোট ছেলে মোজাম্মেল হোসেন শুভ। তার একমাত্র বড়বোন সাবিনা ইয়াসমিন লিজা বিবাহিত।

মোজাম্মেল হোসেন শুভ বলেন, ‘মোটরসাইকেলের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক আমার। টিউশনির টাকা জমিয়ে এর আগে বেশ কয়েকটি পুরাতন মোটরসাইকেল কিনেছি। সর্বশেষ গত তিন-চার মাস আগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি থেকে অফারে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে (টিভিএস-আরটিআর) মডেলের নতুন মোটরসাইকেলটি কিনি।’

তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহারের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণে যাই। আমরা ২৫০-৩০০ ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে যাই কিন্তু সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত হয়। মানুষের অসহায় মুখ দেখে নিজে কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। সে চিন্তা থেকে বন্ধুর কাছে আমার মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেই।’শুভ বলেন, বেঁচে থাকলে আরও মোটরসাইকেল কিনতে পারব। কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়তো আর পাবো না।

ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে খুশি মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে সরকারের পাশাপাশি যে যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ালে মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। শুভর মতো সবাইকে এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহার বলেন, ‘অত্যন্ত মানবিক একটা ছেলে শুভ। যেকোনো সেবামূলক কাজে তাকে সবসময় পাশে পাই। করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণেও আমার সঙ্গে নিয়মিত অংশ নেয় শুভ। তবে নিজের শখের মোটরসাইকেল বিক্রি করে মানবতার সেবায় কাজ করছে শুনে আমি আবেগাপ্লুত হয়েছি। শুভর মতো করে আমরা যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে করোনা আমাদের হারাতে পারবে না।’

রাশেদুল হাসান/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।