লকডাউনের মধ্যে কীভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢুকছে মানুষ?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মালয়েশিয়াফেরত।
তাদের মাধ্যমেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্থানীয় অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু চলমান লকডাউনের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপাত্তা চৌকি পেরিয়ে কীভাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মতো করোনাভাইরাসের হটস্পট জেলাগুলো থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষ ঢুকছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে লকডাউনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। লকডাউনের সময়ে অন্য জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ এবং প্রস্থান নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়ক এবং নৌপথে অন্য জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবেশ অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অন্য জেলায় গমনও নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা না মেনে প্রতিনিয়ত অন্য জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবেশ করছে মানুষ। এতে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি।
লকডাউনের মধ্যেই চট্টগ্রামে মারা যাওয়া এক বৃদ্ধের মরদেহ নিয়ে তার স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে দাফন করার জন্য। দাফন শেষে ষাটোর্ধ্ব বসয়ী ওই বৃদ্ধার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় ২৮ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই দিনই তাকে জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নেয়া হয়। তার সঙ্গে তার ছেলেকেও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (০১ মে) ওই বৃদ্ধার কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসায় তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিল সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে এক ভ্যানচালক তার পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামে আসেন। পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশায় করে ভেঙে ভেঙে তিনি চরচারতলা গ্রামে আসেন বলে প্রশাসনকে জানিয়েছেন। মূলত লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তিনি। পরবর্তীতে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরে আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের জেলার নাসিরনগর উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রবেশপথগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক। এছাড়া নদীপথেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসার ব্যবস্থা রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়িয়ে পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা ও ট্রলারে করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে অনেক মানুষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন। প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে লকডাউনের মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে থাকা হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢুকছে মানুষ?
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে কীভাবে মানুষ ঢুকছে এমন প্রশ্নের জবাবে হাইওয়ে পুলিশের সিলেট জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালমান ফার্সি বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে পাকা ধান কাটার শ্রমিক, পণ্য পরিবহন ও জরুরি পরিষেবা সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকে মহাসড়কে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। এরপরও বিভিন্ন ছলচাতুরি করে যারা চলে আসেন, তাদের আবার পুশব্যাক করা হচ্ছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কাউকে সাজা দেয়া হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, অন্য জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রী আগমন ঠেকাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোলপ্লাজায় একটি এবং বিজয়নগরে পুলিশের একটি নিয়মিত নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশপথ কসবায় আরও একটি চৌকি রয়েছে। অনেক সময় যাত্রীরা অন্য জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রবেশমুখে এসে যানবাহন থেকে নেমে রাস্তায় বসে পড়ে। এতে সমস্যা দেখা দেয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে তাদের কাছেও যাওয়া যায় না। ফলে সমস্যা হচ্ছে। এরপরও যারা মহাসড়কে যানবাহন নিয়ে আসেন তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ জন। আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও মালয়েশিয়াফেরত। তাদের মাধ্যমেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্থানীয় অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/এমকেএইচ